দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করা শারীরিক প্রতিবন্ধী রবিকুল ইসলামকে (৫০) এখন আর ভিক্ষা করতে হবে না। তাকে একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা দিয়েছেন নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজী মো. আব্দুর রহমান। 

বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে প্রতিবন্ধী রবিকুল ইসলামের হাতে ৫৭ হাজার টাকা মূল্যের নতুন ব্যাটারিচালিত রিকশা তুলে দেন তিনি। 

এ সময় কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মইনউদ্দিন খন্দকার, পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুল হক ভূঞা, কেন্দুয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাহ নেওয়াজ, কেন্দুয়া উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি সমরেন্দ্র বিশ্ব শর্মা, স্থানীয় মানবাধিকারকর্মী মামুনুল কবীর খান হলি, শাহ আলী তৌফিক রিপন, মেহেরুন্নেসা নেলী ও ঢাকা পোস্টের প্রতিনিধি মো. জিয়াউর রহমানসহ সরকারি কর্মকর্তা এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত ২২ জানুয়ারি ‘একটি ইজিবাইক হলে আর ভিক্ষা করবেন না রবিকুল’ শিরোনামে জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল ঢাকাপোস্ট.কমে ভিডিওসহ সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিষয়টি কেন্দুয়া উপজেলা ও নেত্রকোনা জেলা প্রশাসনের নজরে আসে। অসহায় রবিকুলকে ব্যাটারিচালিত রিকশা প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

এদিকে নতুন রিকশা পেয়ে আনন্দিত রবিকুল ইসলাম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি বলেছিলাম আমাকে একটা ইজিবাইকের ব্যবস্থা করে দিলে আমি আর ভিক্ষা করব না। কারণ ভিক্ষা করতে আমার লজ্জা লাগে। মানুষ আমাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করে। ঢাকা পোস্টে আমাকে নিয়ে খবর প্রকাশের পর ডিসি এবং ইউএনও স্যার আমাকে একটি নতুন ব্যাটারিচালিত রিকশা দিয়েছেন। আমার আশা পূর্ণ হয়েছে। আমি আর ভিক্ষা করতে চাই না। এ রিকশার আয় দিয়েই চলতে পারব ইনশাআল্লাহ।

এ সময় উপস্থিত মানবাধিকার কর্মী মামুনুল হক খান হলি, শাহ আলী তৌফিক রিপন ও মেহেরুন্নেসা নেলী বলেন, ঢাকা পোস্টে একটি সংবাদ প্রকাশের কারণে একজন প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক আজ সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা পেয়েছেন। ঢাকা পোস্ট তাদের সংবাদের মাধ্যমে দেশের সুবিধাবঞ্চিত, অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষের সেবাও করছে। এ জন্য ঢাকা পোস্টকে ধন্যবাদ। 

এ বিষয়ে কথা হলে নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজি মো. আব্দুর রহমান বলেন, সরকার ভিক্ষুকদের পুনবার্সনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এরই আওতায় আমরা শারীরিক প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক রবিকুল ইসলামকে পুনর্বাসনের লক্ষে একটি নতুন ব্যাটারিচালিত রিকশা কিনে দিয়েছি। আশা করি তাকে আর ভিক্ষা করতে হবে না।  

প্রতিবন্ধী রবিকুল ইসলামের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের আতকাপাড়া গ্রামে। তিনি আতকাপাড়া গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে। বৃদ্ধ বাবা, স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক ছেলেসহ ৭ সদস্যের বৃহৎ পরিবার রবিকুলের। সংসারে আর কোনো উপার্জনশীল ব্যক্তি না থাকায় পুরো সংসারের ভরণপোষণের কঠিন দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে প্রতিবন্ধী রবিকুলের একাই। সাত বছর বয়সে রবিকুলের টাইফয়েড জ্বর হয়েছিল। আর সেই থেকেই তার পা দুটি অকেজো। হাঁটতে পারেন না। তাই মানুষ তাকে কোনো কাজ দেয় না। অবশেষে কোনো উপায় না দেখে জীবন চালাতে বাধ্য হয়েই মানুষের কাছে হাত পাততে শুরু করেন তিনি। 

সারাদিন ভিক্ষা করে ৫শ-৬শ টাকার মতো হয় তার। তা দিয়েই কোনোরকম চলে সংসার। এভাবেই গত ১৫ বছর ধরে ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করে কোনো রকম জীবন চালিয়ে আসছিলেন তিনি। সম্প্রতি কেন্দুয়া পৌরশহরের বাদে আঠার বাড়ি তুরুকপাড়া গ্রামে ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করতে গেলে দেখা হয় ঢাকা পোস্টের নেত্রকোনা জেলা প্রতিনিধির সঙ্গে। তারপর তিনি তাকে নিয়ে ঢাকা পোস্টে ভিডিওসহ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।   

জিয়াউর রহমান/আরএআর