চুয়াডাঙ্গায় জমির উদ্দিন বিশ্বাস (২৮) নামে এক যুবক স্বাবলম্বী হওয়ার কারণে উপজেলা প্রশাসনের কাছে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর ফেরত দেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। বছর খানেক আগেও তিনি পেশায় ছিলেন একজন দিনমজুর। সারাদিনের উপার্জিত অর্থ দিয়ে কোনো রকমে চলছিল তার সংসার। তবে ভূমিহীন হওয়ায় ঠাঁই হয়েছিল মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে। এতে কিছুটা কষ্ট লাঘব হলেও স্বাচ্ছন্দ্য আসছিল না। 

তবে মাথা গোঁজার ঠাঁই হওয়ায় বিভিন্ন এলাকা থেকে কলা ক্রয় করে বাজারে বিক্রি করে প্রতিদিন ৫শ থেকে ১ হাজার টাকা আয় করছেন জমির উদ্দিন বিশ্বাস। এতে প্রতি মাসে তার আয় হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। পরিবারে এসেছে আর্থিক সচ্ছলতা। জমি কিনে টিনশেড বাড়িও করেছেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে এখন ভালোই আছেন তিনি। 

এসব উল্লেখ করে গত ১৮ জানুয়ারি নিজের উপহারের ঘরটি এলাকার অন্য দরিদ্র অসহায় মানুষকে দেওয়ার জন্য জীবননগর উপজেলা প্রশাসনের নিকট লিখিত আবেদন করেছেন জমির উদ্দিন বিশ্বাস। 

কলা ব্যবসায়ী জমির উদ্দিন বিশ্বাস চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের শাহাপুর গ্রামের মৃত খেদের বকসোর ছেলে। এক মেয়ে, স্ত্রী নিয়ে সংসার তার। গত বছরের ২০ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। ভূমিহীন ও দিনমজুর হওয়ায় আবেদনের প্রেক্ষিতে জমির উদ্দিন জীবননগর উপজেলার আন্দলবাড়িয়া গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পান। সেখানে পরিবারসহ বসবাস শুরু করেন তিনি। এরপর থেকে শুরু করেন কলার ব্যবসা। এখন তিনি স্বাবলম্বী।

জীবননগর উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ জানুয়ারি জমির উদ্দিন বিশ্বাস একজন ভূমিহীন ব্যক্তিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার বসতঘর ও জমির দলিল হস্তান্তরের জন্য লিখিত আবেদন করেন। এরপর জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  আরিফুল ইসলাম রাসেল, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হুমায়ন কবির ও আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ শফিকুল ইসলাম মোক্তার জমির বিশ্বাসের বাড়িতে হাজির হন এবং তার সঙ্গে কথা বলেন।

তবে আন্দুলবাড়ীয়া ইয়নিয়নের ইউপি সদস্য মহসিন আলী বলেন, আমি জমির বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি এখনো তেমন স্বাবলম্বী হননি। তবে একটু উন্নতি হয়েছে। চার বোনের একটি মাত্র ভাই জমির বিশ্বাস। এ কারণে বোন ও চাচাতো ভাইদের ইচ্ছা জমির বিশ্বাস তাদের কাছাকাছি থাকুক। কেননা জমির বিশ্বাস তাদের ছেড়ে  কখনও দূরে থাকেননি। জমির বিশ্বাসের নামে তিন কাঠা জমিও লিখে দিয়েছেন বোনেরা। এ জন্য তাদের কথা শুনে উপহারের ঘরটি অন্যত্র হস্তান্তরের জন্য আবেদন করেছেন জমির বিশ্বাস।


আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ শফিকুল ইসলাম মোক্তার বলেন, জমির বিশ্বাস মোটামুটি স্বাবলম্বী হয়েছেন। কলার ব্যবসা করে প্রতিদিন ৫শ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছেন। তাই তিনি নিজ উদ্যোগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর ফেরত দেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। তার এই মহতী উদ্যোগটা অনেক ভালো।

এ বিষয়ে জমির উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, আমার বোনেরা ও চাচাতো ভাইয়েরা চায় আমি তাদের কাছাকাছি বসবাস করি। আমারও এখানে একা একা পরিবার নিয়ে থাকতে মন টানে না। আমার বাবার পৈতৃক সম্পত্তির দেড় কাঠা জমি পেয়েছি, আর বোনেরা আমাকে এক কাঠা জমি দিয়েছে। যেহেতু এখন আমি ভূমিহীন নয়, এ জন্য আমি উপহারের ঘরটি অন্য ভূমিহীনকে দেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছি। এছাড়াও এখন মোটামুটি ব্যবসায় উন্নতি হয়েছি৷

জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম রাসেল বলেন, জমির বিশ্বাস তার নামে পাওয়া উপহারের ঘরটি অন্য ভূমিহীনকে দেওয়ার জন্য আমাদের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। বর্তমানে তিনি নিজ নামে জমি কিনে সেখানে টিনসেড ঘর করে বসবাস করছেন। তিনি কলার ব্যবসা করে গড়ে মাসে ২০ হাজার টাকা আয় করছেন। এ কারণে তার উপহারের ঘরে পাশের অন্য একজন দরিদ্র ব্যক্তিকে দেওয়ার জন্য আমাদের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয়ের অনুমতি পেলেই উপহারের ঘরটি অন্যজনকে দেওয়া হবে।

চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি জেনেছি জমির বিশ্বাসের জমি ও ঘর হয়েছে এখন। বর্তমানে তিনি কলার ব্যবসা করে মোটামুটি সাবলম্বী। বিষয়টি খোঁজ নেয়া হচ্ছে, আসলেই তিনি স্বাবলম্বী হয়েছেন কিনা। পাশাপাশি বিষয়টি প্রকল্প অফিসে জানিয়েছি। সেখান থেকে পাওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হবে।

আফজালুল হক/আরএআর