সংসার ভেঙে যাচ্ছিল জুলহাস-জেসমিন দম্পতির। অবশেষে পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলামের সহযোগিতায় তারা ফিরে পেয়েছেন তাদের সুখের সংসার। শুধু জুলহাস-জেসমিন নয়, এমন আরও কয়েক দম্পতির সংসারের ভাঙন রোধ করেছেন তিনি। এ কারণে প্রশংসায় ভাসছেন চুয়াডাঙ্গার এসপি।

জানা গেছে, সাত বছর আগে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের ঝোড়াঘাটা গ্রামের আব্দুল মোমিনের ছেলে জুলহাসের (২৫) সঙ্গে দামুড়হুদা উপজেলার দশমীপাড়ার মহর আলীর মেয়ে জেসমিনের (২২) পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে একটি কন্যাসন্তান। মেয়েকে নিয়ে ভালোই কাটছিল তাদের সংসার। হঠাৎ তাদের সংসারে কলহ দেখা দেয়। 

মাঝেমধ্যে যৌতুকের দাবিতে জেসমিনকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন জুলহাস ও তার পরিবারের লোকজন। জেসমিন খাতুন বিষয়টি তার বাবা মহর আলীকে জানালে তিনি মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে কিছু টাকা দেয় এবং মেয়েকে শ্বশুরবাড়িতে পাঠান। জুলহাস টাকাগুলো বিপথে নষ্ট করে আবার জেসমিনের ওপর শারীরিক নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। জেসমিন  তার সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেয়।  

এ ঘটনার পর থেকে জুলহাস ও তার পরিবারের লোকজন জেসমিনের কোনো খোঁজখবর নিতেন না। বিষয়টি সমাধানের জন্য জেসমিন ও তার পরিবারের সদস্যরা বিভিন্নজনের কাছে গিয়েও কোনো সমাধান হয়নি। বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে যায় জেসমিনের পরিবার।

পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম তাদের সমস্যা শোনেন এবং সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন। এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে তার কার্যালয়ে অবস্থিত উইমেন্স সাপোর্ট সেন্টারকে নির্দেশ দেন।

উইমেন সাপোর্ট সেন্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মিতা রানী বিশ্বাস উভয় পক্ষকে সাপোর্ট সেন্টারে ডেকে আনেন। উভয়ের সমস্যার কথা শোনেন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য উভয়কে অনুরোধ করেন। অবশেষে ভুল বুঝতে পারে জুসহাস ও তার পরিবার। জুলহাস ভুল স্বীকার করে জেসমিনের সঙ্গে সংসার করতে রাজি হন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুল না করার প্রতিশ্রুতি দেন।

এএসআই মিতা রানী বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের ‘উইমেন্স সাপোর্ট সেন্টার’ একাধিক পরিবারকে ভেঙে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেছে। উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান দিয়েছে। উইমেন্স সাপোর্ট সেন্টারের পদক্ষেপ দেখে ভুক্তভোগীরা আসছেন। কেউ সমাধান ছাড়া ফিরে যাননি। এজন্য পুলিশ সুপার প্রশংসার দাবিদার।

চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার (এসপি) জাহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেক সময় ছোটখাটো সমস্যার কারণে অনেকের সংসার ভেঙে যায়। এতে অনেক শিশু মা-বাবার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়। ওসব শিশুর সঠিক বিকাশ হয় না। এসব দেখে জেলা পুলিশ উদ্যোগ নিয়েছে উইমেন্স সাপোর্ট সেন্টারের মাধ্যমে সেবা দেওয়ার। এই সেবার মাধ্যমে কোর্ট এবং থানায় মামলার জট অনেকটাই কমেছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের উদ্যোগে উইমেন্স সাপোর্ট সেন্টারের মাধ্যমে জুলহাস-জেসমিন দম্পতি ফিরে পেলেন তাদের সুখের সংসার। সন্তান ফিরে পেল পিতৃস্নেহ।

আফজালুল হক/এসপি