অতীত গোপন করে অনুতপ্ত সেই সোহেল
‘আমি আগে একটা বিয়ে করেছিলাম। তবে সেই সংসারে আমি টিকতে পারিনি। নানা কারণে আমাকে ওই সংসার ছাড়তে হয়েছে। কিন্তু আমি প্রতারণা করিনি। আমি রওশনকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি। ১৪ বছরে তার আপদ বিপদে আমি তাকে ছেড়ে যাইনি। আমরা একে অপরকে ভালোবাসি।’ অতীতের কথাগুলো এভাবেই বলছিলেন সোহেল মিয়া।
১৪ বছর আগে ভালোবেসে ময়মনসিংহের ত্রিশালের প্রতিবন্ধী রওশন আক্তারের সঙ্গে সংসার পেতেছিলেন এই সোহেল। স্বামীর সাহায্য নিয়েই সব কাজ করতে হয় রওশনের। এমনকি সোহেল মিয়ার পিঠে চড়েই যাতায়াত করেন বিভিন্ন জায়গায়। তাদের এমন ভালোবাসার গল্প নিয়ে ঢাকা পোস্টসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর বেরিয়ে এসেছে সোহেলের অতীত এক ঘটনা৷ তার আসল নাম মোখলেছুর রহমান (বকুল)। বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে। আগের সংসারে স্ত্রী ছাড়াও তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
তবে এসব তথ্য গোপন করেছিলেন সোহেল মিয়া। শুধু তাই নয়, শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন তিনি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অনুতপ্ত হয়ে সোহেল বলেন, রওশনকে বিয়ের পর আমি বাড়িতে গিয়েছিলাম ক্ষমা চাইতে, কিন্তু তারা মেনে নেয়নি। আগের সংসারের স্ত্রী-সন্তানেরাও চাইত না আমি তাদের পরিচয় দেই। তাই সেই তথ্য সামনে আনতে চাইনি, গোপন করেছি।
বিজ্ঞাপন
শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার ব্যাপারে বলেন, প্রেমের সময় রওশনকে বলেছিলাম আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। এই একটা মিথ্যা কথা আজ আমার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন কেউ আমার এই ১৪ বছরের ভালোবাসা দেখছে না। শিক্ষাগত যোগ্যতার মিথ্যা কথা বলাটা আমার ভুল হয়েছে। এজন্য সবার কাছে আমি ক্ষমা চাই।
সোহেল মিয়ার আগের সংসারের বড় ছেলে মো. শিহাব উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ২০০৪ বা ২০০৫ সালের দিকে কাজের কথা বলে ঢাকায় গিয়ে তার বাবা নিখোঁজ হন। তাদের পক্ষে তাকে খুঁজে বের করার সামর্থ্য ছিল না। সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত খবর এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আলোচনায় আসা ছবি ও ভিডিও দেখে বাবাকে চিনতে পারেন।
শিহাব বলেন, আমরা সোহেল মিয়া বা মোখলেছুর রহমানের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেব না। আর তার দ্বিতীয় স্ত্রী রওশনের তো কোনো দোষ নেই।
রওশন আক্তারের স্বজন আজিজুল বলেন, আমরাও এখন শুনছি সোহেল মিয়া আগে বিয়ে করেছিলেন। তবে প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি রওশনকে যেভাবে আগলে রেখেছেন, সেটাও তো মিথ্যা নয়।
এদিকে এ ব্যাপারে মিডিয়ায় বাড়াবাড়ি না করতে আকুতি জানিয়েছেন রওশন আক্তার। তিনি বলেন, সোহেলের আগের সংসার নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। তিনি আমাকে ভালোবাসেন, এটি মিথ্যা নয়। প্রায় ১৫টি বছর ধরে আমার মতো অসুস্থ একজনের সঙ্গে সংসার করছেন তিনি। আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে তাকে জয় করেছি।
তিনি হাত জোড় করে বলেন, আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ, আমার সংসারটি কেউ ভাঙবেন না। আমি একজন প্রতিবন্ধী, আপনাদের মতো আমি সুস্থ নই।
সোহেলের আগের স্ত্রীর সঙ্গে থাকতে রাজি জানিয়ে সংবাদমাধ্যম কর্মীদের কাছে বিষয়টি নিয়ে আর কিছু প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন রওশন।
সম্প্রতি সোহেল-রওশন দম্পতির ভালোবাসা নিয়ে ঢাকা পোস্টসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা খবর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েরও নজরে এসেছে। সেখান থেকে তাদের পারিবারিক অবস্থার খোঁজ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান এই দম্পতির বাড়িতে যান এবং তাদের চাহিদা বা প্রয়োজনগুলো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে জানাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
উবায়দুল হক/আইএসএইচ