ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের গোকর্ণ বাজার থেকে রসুলপুর গ্রামে যাওয়ার সড়কের দুই পাশ বছরের অর্ধেক সময় পানিতে টইটম্বুর থাকে। তখন মনে হয় সড়কটি পানির ওপর ভাসছে। স্বচ্ছ জলরাশিতে দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠে সড়কটি। পানির ঢেউ আছড়ে পড়ে সড়কের দুই পাশে। পানির এ অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে দূর-দূরান্ত থেকে ভিড় জমান দর্শনার্থীরা। আর তাই বর্ষা মৌসুমকে ঘিরেই জেলার নবীনগর উপজেলার নাটঘর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামে গঠে উঠেছে বেশ কয়েকটি মিনি পার্ক ও রেস্তোরাঁ। ফলে বর্ষাকালে পর্যটকে মুখর থাকে হাওরবেষ্টিত রসুলপুর। যদিও শুষ্ক মৌসুমে পার্ক-রেস্তোরাঁগুলোতে ক্রেতা-দর্শনার্থী কমে যায়।

তবে এবার পর্যটক ধরে রাখতে রসুলপুরের পার্ক-রেস্তোরাঁগুলোর তরফ থেকে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছে। মেলা রসুলপুর এবং ক্যাফে ডটকম নামে দুটি পার্ক ও রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছে। সবুজ গাছের ডগায় হলুদ সূর্যমুখী ফুলের সৌন্দর্য বিমোহিত করছে দর্শনার্থীদের। প্রতিদিনই বাগানগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন তারা।

সরেজমিনে রসুলপুর এলাকায় দেখা গেছে, মেলা রসুলপুর ও ক্যাফে ডটকম রেস্তোরাঁর পশ্চিম পাশের কয়েকটি জমিতে সূর্যমুখী ফুল চাষ করা হয়েছে। বাতাসে দুলছে হলুদ সূর্যমুখী। নান্দনিক এ দৃশ্য অবলোকন করছেন দর্শনার্থীরা। তবে ফুলের সঙ্গে ছবি তুলতে গিয়ে কেউ কেউ ফুল ছিঁড়ে ফেলেন। এজন্য বাগানের পাহারায় লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

সূর্যমুখীর বাগান দেখতে এসেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের বাসিন্দা বাহাদুর আলম। তিনি জানান, পানির সময় রসুলপুর সড়কটি অনেক বেশি সুন্দর লাগে। দুই পাশে স্বচ্ছ জলরাশির সৌন্দর্যে মন জুড়িয়ে যায়। তবে এখন পানি না থাকলেও সূর্যমুখীর বাগান দেখে ভালো লাগছে। মিষ্টি রোদে বাতাসে দুলছে সূর্যমুখী ফুল। এই দৃশ্য খুবই চমৎকার।

আরেক দর্শনার্থী হাসান মিয়া জানান, সূর্যমুখীর বাগান দেখার উদ্দেশে পরিবার নিয়ে মেলা রসুলপুর পার্কে এসেছেন। পার্কে ঘোরার পাশাপাশি সূর্যমুখীর বাগান দেখে অভিভূত হয়েছে তার পরিবার।

ক্যাফে ডটকম রেস্তোরাঁর স্বত্বাধিকারী খায়রুল আলম জানান, বর্ষা মৌসুমকে কেন্দ্র করে রসুলপুরে কয়েকটি মিনি পার্ক ও রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে। জেলা সদরের কাছাকাছি হওয়ায় পরিবার নিয়ে একটু সময় কাটাতে মানুষজন চলে আসেন রসুলপুরে। তবে যখন পানি থাকে না, তখন পার্ক-রেস্তোরাঁগুলোতে বেচাকেনা কমে যায়। সেজন্য পর্যটক টানতে এবার আমরা সূর্যমুখীর বাগান করেছি। আমার বাগানটি প্রায় ২০ শতাংশ জায়গায়। পর্যটকরা এখন সূর্যমুখী দেখার জন্য আমাদের পার্ক-রেস্তোরাঁয় আসছেন।

নবনীগর উপজেলার নাটঘর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ বলেন, রসুলপুর এলাকার কৃষকরা সূর্যমুখী চাষে খুব একটা আগ্রহী না। অথচ সূর্যমুখীর চাষ খুবই লাভজনক। আমরা কৃষকদের সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করছি। এখন রেস্তোরাঁ-পার্কগুলোতে সূর্যমুখী চাষের ফলে পর্যটকরা ভিড় করছেন। এতে করে কৃষকরাও সূর্যমুখী চাষে উদ্বুদ্ধ হবেন বলে আশা করছি।

আজিজুল সঞ্চয়/এসপি