কক্সবাজারের চকরিয়ায় পিকআপচাপায় পাঁচ ভাইয়ের পর আহত রক্তিম সুশীলও মারা গেছেন। মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে (ভেন্টিলেটর) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এর আগে ৮ ফেব্রুয়ারি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন তিনি। 

সরেজমিনে রক্তিমের বাড়িতে দেখা যায়, ছেলের মৃত্যুর কথা শুনে অঝোরে কাঁদছেন মা মিনু রাণী। বিলাপ করে বলছেন, আমার পাঁচ ছেলে একদিনে চলে গেছে। এখন রক্তিমও চলে গেল। আমাকে মা বলে ডাকবে কে? এত শোক কেমনে সহ্য করব? 

প্রসঙ্গত, ৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে সদ্যপ্রয়াত বাবা সুরেশ চন্দ্রের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে গিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মালুমঘাট এলাকায় পিকআপ ভ্যানচাপায় অনুপম সুশীল (৪৬), নিরুপম সুশীল (৪০), দীপক সুশীল (৩৫), চম্পক সুশীল (৩০) ও স্মরণ সুশীল (২৯) নিহত হন। আহত হয় রক্তিম সুশীল ও তার এক বোন।

ঘটনার ১০ দিন আগে তাদের বাবা সুরেশের মৃত্যু হয়। বাবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যোগ দিতে তারা ৯ ভাইবোন বাড়িতে সমবেত হয়েছিলেন। সেখানকার একটি মন্দিরে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান শেষে একসঙ্গে হেঁটে বাড়িতে আসার জন্য সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় পিকআপের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই চারজনের মৃত্যু হয়। বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরেক ভাই। 

ঘটনায় অক্ষত অবস্থায় বেঁচে যান সুরেশচন্দ্র সুশীলের মেয়ে মুন্নী সুশীল। আহত হন সুরেশচন্দ্রের আরও দুই ছেলে ও এক মেয়ে।আহতদের মধ্যে রক্তিম সুশীল আজ সকাল ১০টায় চট্টগ্রামের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে মারা গেছেন। মেয়ে হীরা সুশীল মালুমঘাট খ্রিষ্টান মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে তার একটি পা কেটে ফেলা হয়েছে।

নিহতদের বোন মুন্নী সুশীল দাবি করেন, ঘটনার সময় অন্য ভাইবোনদের সঙ্গে আমিও উপস্থিত ছিলাম। আমরা মৃত বাবার জন্য পূজা শেষে বাড়ি ফিরতে রাস্তা পার হচ্ছিলাম। তখনই পিকআপটি ধাক্কা দিলে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। পিকআপ প্রথমে ধাক্কা দিয়ে কিছুদূর সামনে এগিয়ে গিয়েছিল। পরে চালক গাড়িটি পেছনের দিকে চালিয়ে এনে চাপা দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এটা নিছক দুঘর্টনা নয়, হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করেন তিনি।

এদিকে পাঁচ ভাইকে চাপা দেওয়া পিকআপ ভ্যানের চালক সাহিদুল ইসলামকে শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে আটক করেছে র‌্যাব। তাকে আটকের পর র‌্যাব জানায়, ঘটনার দিন রাস্তায় বেশি কুয়াশা ছিল। চালক দ্রুত কক্সবাজার পৌঁছে সবজি ডেলিভারি দেওয়ার জন্য বেপরোয়াভাবে পিকআপটি চালাচ্ছিলেন। অধিক কুয়াশা ও অতিরিক্ত গতির কারণে মালুমঘাট বাজারের নার্সারি গেটের সামনে রাস্তা পার হওয়ার জন্য অপেক্ষারতদের দূর থেকে লক্ষ্য করেননি তিনি। গাড়ির গতি বেশি থাকার কারণে কাছাকাছি এসে লক্ষ্য করলেও গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ না করতে পারায় দুর্ঘটনাটি ঘটে।

সাইদুল ফরহাদ/এসপি