ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে মাঝসমুদ্রে ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির কবলে পড়ে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় মারা যাওয়া সাফায়েত মোল্লার মরদেহ নিজ বাড়িতে এসেছে। সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাতে মরদেহ পৌঁছানোর পর সকালে জানজা শেষে নিজ বাড়ির পাশে তাকে দাফন করা হয়। 

সাফায়েত মোল্লা (২০) মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ইশিবপুর ইউনিয়নের উমারখালী গ্রামের কাশেম মোল্লার ছেলে।

গত রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মরদেহ এসে পৌঁছায়। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে সাফায়েতের মরদেহ গ্রামের বাড়ি নিয়ে আসা হয়। তার মরদেহ এক নজর দেখতে ভিড় করেন পাড়া-প্রতিবেশী ও স্বজনরা। ইতালিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতায় (চতুর্থ দফায়) সাফায়েতের মরদেহ বাড়িতে পৌঁছানোর পর এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

এর আগে, মারা যাওয়া প্রথম দফায় ইমরান হাওলাদার, দ্বিতীয় দফায় জয় তালুকদার এবং তৃতীয় দফায় জহিরুল ইসলাম শুভর মরদেহ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। 

প্রসঙ্গত, গত ২৪ জানুয়ারি ২৮৭ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালির উদ্দেশ্যে রওনা হন। তাদের মধ্যে ২৭৩ জনই বাংলাদেশি নাগরিক। অন্যরা মিসরীয় নাগরিক। তিউনিসিয়ার ভূমধ্যসাগরে মাঝখানে যাওয়ার পর ঝোড়ো বাতাস ও টানা ছয় ঘণ্টা বৃষ্টিপাতের কবলে পড়ে তাদের নৌযান। এ সময় প্রচণ্ড ঠান্ডায় হিম হয়ে মারা যান সাত বাংলাদেশি।

গত ২৫ জানুয়ারি বিষয়টি জানতে পারে বাংলাদেশ ইতালির দূতাবাস। বাংলাদেশ ইতালি দূতাবাস থেকে জরুরি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যামে নিশ্চিত করেন যে, মারা যাওয়া সাত বাংলাদেশির মধ্যে পাঁচজনই মাদারীপুর জেলার। পরে সুনির্দিষ্টভাবে তাদের পরিচয় শনাক্ত করে মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন করতে আহ্বান জানিয়েছিলেন দূতাবাস।

এদিকে, দালাল চক্রের হাতে প্রতিনিয়ত ঘটছে অপ্রিতিকার ঘটনা। চক্রের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন মাদারীপুরের অসংখ্য পরিবার এবং জীবন দিতে হয়েছে অনেক যুবককে। দালাল চক্রের সাথে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন সাফায়েতের স্বজন ও এলাকাবাসীরা।

সাফায়েত মোল্লার দুলাভাই রাসেল মিঞা বলেন, সাফায়েতের মৃত্যুর খবর অনেক দিন দালালেরা গোপন রেখেছিলেন। তারা আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছিলেন যে সাফায়েত অসুস্থ, তাই হাসপাতালে আছে। এর কয়েকদিন পরে, সাফায়েতের সঙ্গে বেঁচে যাওয়া একজনের কাছ থেকে মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হতে পারি।

তবে কোন দালালের মাধ্যমে সাফায়েত গিয়েছেন তা বলতে রাজি হনিনি তার পরিবার।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, কয়েকদিন আগে ইতালিতে নিহত একজনের লাশ আসার খবর পেয়ে তার বাড়িতে আমাদের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গিয়েছিলেন। তবে পরর্বতীতে যে লাশ এসেছে সেগুলোর খবর আমাদের জানানো হয়নি। তবে পরিবারের সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন হলে আমরা চেস্টা করব তাদের সহযোগিতা করার।

মাদারীপুর পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, এ বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ করলে আমরা আইনি ব্যাবস্থা গ্রহণ করব। তবে অধিকাংশ সময় নিহতের পরিবার কোনো অভিযোগ করে না। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের সব ধরনের আইনি সহায়তা দিতে চাই।

নাজমুল মোড়ল/আরআই