১৭ দিনে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ায়, রেকর্ড গড়লেন সবুজ
'SAY YES FOR WALK, SAY NO FOR THERAPY' : ‘হাঁটাকে হাঁ বলুন, থেরাপিকে না বলুন'— এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে থেরাপির পরিবর্তে মানুষকে হাঁটার উপকারিতা বোঝাতে ও সচেতন করতে মাত্র ১৭ দিন হেঁটে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ায় কার্যক্রম শেষ করলেন সবুজ কুমার বর্মণ প্রবাল নামের এক যুবক। শুধু তা-ই নয়, ১০০ কিলোমিটার সড়কপথ মাত্র ১৭ ঘণ্টায় হেঁটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রেকর্ড করেন তিনি।
সবুজ কুমার পেশায় একজন ফ্যাশন ডিজাইনার। কর্মরত আছেন রাজধানী ঢাকার একটি বায়িং হাউসে। থেরাপির পরিবর্তে মানুষকে হাঁটার উপকারিতা বোঝাতে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে হেঁটে ছুটে চলেন তিনি। অফিসের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হাঁটার সুযোগ পান না। তাই সপ্তাহে পাঁচ দিন অফিস করে বাকি দুদিন তিনি হাঁটতেন।
বিজ্ঞাপন
সবুজ চলতি বছরের ১ জানুয়ারি টেকনাফের জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু করেন হাঁটা। দুদিন হাঁটার পর যে স্থানে থামতেন, সেখানে চিহ্ন রেখে তিনি বাসে করে ঢাকায় ফিরে এসে অফিস করতেন। পাঁচ দিন অফিস করার পর আবার দুদিনের ছুটিতে গিয়ে আগের স্থান থেকে হাঁটা শুরু করতেন। এভাবে পর্যায়ক্রমে হাঁটতে হাঁটতে ২১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্টে এসে ১৭তম দিনে পদযাত্রা শেষ করেন তিনি।
এদিকে এমন উদ্যোগে অনুপ্রাণিত হয়ে তার সঙ্গে দিনাজপুর থেকে যুক্ত হন তার চাচাতো ভাই অনিক কুমার বর্মণ ও দিনাজপুর কে বি এম কলেজের স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী রেখা সরকার। তারা শেষ তিন দিন হাঁটার সুযোগ পেয়ে তেঁতুলিয়ার জিরো পয়েন্টে গিয়ে সবুজের ইতিহাস গড়ার কার্যক্রমের সাক্ষী হন।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, মুজিব বর্ষ উপলক্ষে গেল বছরের ২০ নভেম্বর ১০০ কিলোমিটার সড়ক ২২ ঘণ্টা ২১ মিনিট হেঁটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়েন কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার যুবক সাইফুল ইসলাম শান্ত। তার সেই রেকর্ড ভেঙে এবার ১৭ ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার হেঁটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রেকর্ড নিজের করে নিলেন সবুজ।
এ বিষয়ে সবুজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত বছর আমার করোনা শনাক্ত হলে আমার ৮০ শতাংশ ফুসফুসের ক্ষতি হয়। তবে সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় আমি এখন পুরোপুরি সুস্থ। তখন ইচ্ছা ছিল সুস্থ হলে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ায় হেঁটে যাব। সেই সঙ্গে দেশের মানুষকে ‘হাঁটাকে হাঁ বলুন, থেরাপিকে না বলুন' স্লোগানে হাঁটার উপকারিতার বার্তা পৌঁছে দেব। আমি সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তিতে স্মরণ করতে এমন উদ্যোগ নিই।
তিনি বলেন, ১ জানুয়ারি টেকনাফ থেকে যাত্রা শুরু করি। তবে আমার যেহেতু বেসরকারি চাকরি এবং ছুটিও কম, তাই একটানা হাঁটা সম্ভব না। তাই সপ্তাহের শনি ও রোববার দুদিন ছুটি থাকায় হাঁটতাম। বাকি পাঁচ দিন অফিস করতাম। এভাবে ১৭ দিনে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পৌঁছাই।
দেশের মানুষকে সচেতন করতে এমন উদ্যোগ জানিয়ে সবুজ বলেন, অনেকেই আমার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে আমার সঙ্গে হেঁটে একাত্মতা পোষণ করছেন। অনেকেই প্রতিদিন হাঁটার অভ্যাস করছেন। এতে আমি অনেক আনন্দিত। সবচেয়ে ভালো লেগেছে আমি ১৭ ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার হেঁটে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ রেকর্ড করতে পেরেছি।
সবুজের এমন উদ্যোগ দেখে অনুপ্রাণিত হই। তাই তার সঙ্গে হাঁটা শুরু করি। এমনটা জানিয়ে রেখা সরকার ও অনিক কুমার বর্মন বলেন, ইচ্ছা ছিল প্রবালের সঙ্গে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত হেঁটে যাব। কিন্তু সুযোগ না মেলায় আমরা দুজন দিনাজপুর থেকে যোগ দিয়েছি। তিন দিন তার সঙ্গে হেঁটে মানুষকে হাঁটার বিষয়ে সচেতন করতে পেরেছি, এতে অনেক আনন্দিত আমরা।
এনএ