ডাউনপেমেন্ট (এককালীন জমা) ছাড়াই চলমান ঋণ তিন বছর মেয়াদে পুনঃতফসিলের সুযোগ ও করোনার কারণে ব্যবসায়ীদের ঋণ পরিশোধের সময় আরও বাড়ানোর দাবি করেছেন ব্যাংক মালিকদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)। তাদের এ দাবি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সোমবার ( ৮ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে ব্যাংক মালিকদের জরুরি বৈঠক হয়। এ সময় বিএবির প্রস্তাবগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন গভর্নর।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবর দুটি বিষয় দাবি জানিয়ে চিঠি দেয় বিএবি। এর মধ্যে রয়েছে, কোনো ডাউনপেমেন্ট না দিয়ে চলমান সব ঋণ তিন বছর মেয়াদে পুনঃতফসিলের সুযোগ। এছাড়া বিদ্যমান মেয়াদি ঋণ পরিশোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাড়তি যে দুই বছর সময় দিয়েছে, তা তিন বছর করার দাবি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএবির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, করোনার কারণে ঋণের কিস্তি যেগুলো অপরিশোধিত রয়েছে, সেটা একবারে ব্যবসায়ীদের পক্ষে দেওয়া কষ্টকর হয়ে যাবে। এজন্য আমরা ঋণ পরিশোধে কিছুটা শিথিল হওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুরোধ করেছি। আমাদের যে কথাগুলো সেখানে বলা হয়েছে, সেটা যদি সেভাবে সমন্বয় করা হয় বা রিলাক্স করা হয়, তাহলে সবার জন্যই ভাল হবে। বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। গভর্নর সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন বলেও আশ্বস্ত করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, বৈঠকে ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানোর বিষয়ে ব্যাংক মালিকরা যে অনুরোধ করেছে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন গভর্নর। কারণ তাদের প্রস্তাবগুলোর সঙ্গে ব্যবসায়ীদের স্বার্থই বেশি জড়িত।

দেশের অর্থনীতিতে করোনার বিরূপ প্রভাব বিবেচনা করে ব্যবসায়ীদের ঋণ পরিশোধে ২০২০ সালজুড়ে ছাড় দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে টানা এক বছর ঋণ পরিশোধ না করলেও কেউ খেলাপি হয়নি। তবে ২০২১ সালে এ সুবিধা আর বহাল রাখেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে সম্প্রতি এক সার্কুলারে মেয়াদি ঋণের যে মেয়াদ বাকি আছে, তা পরিশোধের সময় সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ বা দুই বছর পর্যন্ত বাড়ানোর সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এ সুবিধার আওতায় স্বল্প সময়ের মধ্যে সব ব্যবসায়ীর পক্ষে ঋণের টাকা শোধ করা দুষ্কর হবে বলে মনে করে বিএবি।

এর আগে গত ৩১ জানুয়ারি এক সার্কুলারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ঋণ পরিশোধ না করেও খেলাপিমুক্ত থাকার সুবিধা আর বাড়ানো হবে না। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। তা-না হলে নিয়ম অনুযায়ী খেলাপি হয়ে পড়বেন। তবে ব্যবসায়ীদের কিস্তির চাপ কমাতে সুযোগ দেওয়া হবে। মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে অবশিষ্ট মেয়াদের ৫০ শতাংশ অথবা দুই বছরের মধ্যে যেটি কম, সে পরিমাণ বাড়ানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আর চলমান ঋণ ও প্রণোদনার আওতায় বিতরণ করা ঋণ পরিশোধের বিদ্যমান নীতিমালা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই সার্কুলারের সংশোধন দাবি করা হয়েছে।

বিএবির দুই দাবি

প্রথমত : কেন্দ্রীয় ব্যাংক মেয়াদি ঋণের অবশিষ্ট মেয়াদের ৫০ শতাংশ বা দুই বছর অতিরিক্ত সময় বাড়ানোর সুযোগ দিয়েছে। এতে যেসব ঋণের মেয়াদের পরিমাণ বেশি, তারা কিছুটা সুবিধা পাবেন। কিন্তু যাদের অবশিষ্ট মেয়াদ খুবই কম, তাদের কম সময়ে বড় অংকের ঋণ পরিশোধ করতে হবে, যা খুবই দুষ্কর হবে। এতে ঋণের বড় অংশ অনিচ্ছাকৃত খেলাপিতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নগদ টাকা প্রবাহ বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে কমপক্ষে আরও তিন বছর সময় বাড়ানোর সুপারিশ করছি। যাতে করে এ বিপর্যয়কালে ব্যবসায়ি মহল মহামারীর ধকল সামলিয়ে সহনীয়ভাবে ঋণ পরিশোধ করার সুযোগ পায়।

দ্বিতীয়ত : বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ নির্দেশনায় চলতি মূলধন ও তলবি ঋণ সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি, যা এক বছরের মধ্যে পরিশোধযোগ্য ঋণ। এতে মোট ঋণের ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ নির্দেশনার বাইরে রয়ে গেছে। তাই ২০২০ সালের সব কিস্তি ও সুদ এখনই শোধ না হলে চলতি বছরের জানুয়ারিতেই এসব ঋণ খেলাপি হয়ে যেতে পারে। এতে ব্যবসায়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি হবে। সে জন্য চলতি মূলধন ও তলবি ঋণের পরিশোধযোগ্য অংশ এককালীন কোনো জমা ছাড়াই মেয়াদি ঋণ হিসেবে তিন বছরে পরিশোধের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব করছি।

এসআই/এমএইচএস