মোবাইল ফোন গ্রাহকদের আরও বেশি সুবিধা দিতে মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোর করপোরেট করসহ বিভিন্ন করের হার বাস্তবসম্মতভাবে কমানোর দাবি জানিয়েছে এসোসিয়েশন অব মোবাইল অপারেটরস অব বাংলাদেশের (এমটব)।

বুধবার (৯ মার্চ) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় সংগঠনটির মহাসচিব এস এম ফরহাদ তার প্রস্তাবনায় এ দাবি তুলে ধরেন।

এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মু. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রাকবাজেট আলোচনায় এমটব ছাড়াও বৃটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটিবি), বিড়ি শিল্প মালিক সমিতি এবং বাংলাদেশ বেভারেজ ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

এছাড়া এনবিআরের পক্ষে সদস্য মো. মাসুদ সাদিক (কাস্টমস নীতি), জাকিয়া সুলতানা (ভ্যাট নীতি) এবং সামসুদ্দিন আহমেদ (আয়কর নীতি) উপস্থিত ছিলেন। 

আলোচনায় অংশ নিয়ে এমটব মহাসচিব বলেন, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর করপোরেট কর হার ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ এবং অতালিকাভূক্ত কোম্পানির কর হার ৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩২ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করছি।

এ সময় তিনি অলাভজনক অপারেটরের ওপর ন্যূনতম ২ শতাংশ টার্নওভার কর প্রত্যাহার বা যুক্তিসঙ্গত করার দাবিও জানান।

এর পাশাপাশি মোবাইল সিমের ওপর আরোপিত ২০০ টাকা কর বিলুপ্তি ও সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোতে ভ্যাট ছাড়ের প্রস্তাব করে সংগঠনটি। 

এমটব মহাসচিব মোবাইল ডেটা পরিষেবায় সম্পূরক কর কমিয়ে ৫ শতাংশ এবং ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আদর্শ কর হার হিসেবে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন।

ফোর জির ক্ষেত্রেও ভ্যাট প্রত্যাহারের সুযোগ চেয়ে ফরহাদ বলেন, গত বছরের ২৭ জানুয়ারি এক বিশেষ আদেশ অনুযায়ী বিটিআরসিতে টু জি ও থ্রি জির রাজস্ব প্রদানের ক্ষেত্রে ভ্যাট ছাড় দেওয়া হয়েছে। সুতরাং ফোরজির ক্ষেত্রেও এই সুযোগ অব্যাহত রাখার দাবি রাখেন তিনি।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএটিবিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেহজাদ মুনিম নকল ব্যান্ড রোল এবং নকল সিগারেট বন্ধ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এই নকল সিগারেটের কারণে সরকার বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে। নকল সিগারেট বন্ধ করা হলে রাজস্ব আরও বাড়বে।

এই খাতে নতুন করে করারোপ না করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নতুন করে কর বাড়ানো হলে ভোক্তাদের ওপর আরও চাপ বৃদ্ধির পাশাপাশি বিদেশ থেকে চোরাচালান হয়ে বিদেশি সিগারেট ঢুকবে। 

এসময় বিএটিবিসি পরিচালক শেখ সাবাব আহমদও উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনায় এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, সিগারেট আর মদের ওপরে রাজস্ব নির্ভরতা থাকবেই। এই খাতের ওপর রাজস্বের বোঝা বাড়িয়ে খাতটিকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, শুধু ভ্যাট বাড়িয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না বরং চোরাচালানের সুযোগ তৈরি হয়। তাই আমরা প্রতিবছর তামাক কোম্পানিগুলোর বিষয়ে সতকর্তার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি। 

আলোচনায় বিড়ি শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি কৃঞ্চ বিজয় দে এনবিআরের কাছে বিড়ির ওপর অর্পিত ১০ শতাংশ অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের দাবি জানান। এছাড়াও সিগারেটের মতো বিড়িতেও বাকিতে ব্যান্ডরোল প্রদানের দাবি জানান তিনি।

বিড়ি খাতের এই ব্যবসায়ী নেতার দাবি- পরিদর্শন ছাড়া বিড়ি কারখানার লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ করা উচিৎ। পাশাপাশি কাস্টম কর্তৃপক্ষের কাছে নকল কারখানা বন্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ বেভারেজ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. হারুনুর রশিদ খাবার পানির ওপর অর্পিত ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানান।

সব ধরনের কর মিলে কোমল পানীয়র ওপর মোট ৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ কর নেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে এটাকে যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করেন তিনি।

কার্বোনেটেড বেভারেজের সম্পূরক শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব রাখেন তিনি।

আরএম/এনএফ