নিত্যপণ্যের চড়া দামে জীবন যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। তার ওপর করোনা মহামারির কারণে মানুষের আর্থিক অবস্থা ভালো না। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর করের বোঝা হ্রাস করতে আগামী বাজেটে ব্যক্তির করমুক্ত আয়ের সীমা ৪ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) ও বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)।

বুধবার (০৯ মার্চ) জাতীয়  রাজস্ব বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রাক বাজেট আলোচনায় এ প্রস্তাব ‍তুলে ধরেন সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা। এনবিআর সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সংস্থাটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মু. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্ব করেন।

প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) বলেন, গত অর্থবছরে করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ টাকা করা হয়েছে। এটা বাড়ালে ব্যক্তি শ্রেণি থেকে আয়কর বৃদ্ধি পাবে ও রাজস্ব আহরণে ন্যায় বিচার নিশ্চিত হবে। 

এসময় তিনি নারী করদাতা ও ৬৫ বছরের ঊর্ধ্ব করদাতাদের করমুক্ত সীমা সাড়ে চার লাখ এবং যুদ্ধাহত ও প্রতিবন্ধীদের করমুক্ত আয় সীমা ৫ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করেন। একই ধরনের প্রস্তাব দেয় ডিসিসিআই।

বিসিআইর সভাপতি আরও বলেন, গ্রস প্রফিট (জিপি) খাতভিত্তিক ভাবে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে, যা যুক্তি সঙ্গত নয়। আবার জিপি কমে গেলে অথবা ব্যবসায় লস হলে বিবেচনায় নেওয়া হয় না। এমনকি আগের বছরের তুলনায় বিক্রি কম হলেও কর কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় নিতে রাজি হয় না এ ধারণার সমাপ্তি টানা দরকার। নিবন্ধিত হওয়ার পর মুনাফা অর্জনে নির্দিষ্ট সময়ের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এসময়ের ব্যয় অথবা লস বিবেচনা করা হয় না; প্রাথমিক খরচের বিষয়টি (কোম্পানি প্রতিষ্ঠার পূর্বের খরচ) বিবেচনা করার প্রস্তাব করছি।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান আইনে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিভিন্ন খরচের ওপর মূসকের হার ৫ থেকে ১৫ শতাংশ আরোপিত আছে, আমরা এ হার ৩ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে নির্ধারণ এবং রেট নির্বিশেষে সব ক্ষেত্রে উপকরণ কর রেয়াত অনুমোদনের প্রস্তাব করছি।

তরুণ উদ্যোক্তাদের অর্থায়নের জন্য বাজেটে বিশেষ তহবিল গঠন করা হয়েছে উল্লেখ করে বিসিআই সভাপতি বলেন, সুষ্ঠু নীতিমালার অভাবে এ তহবিলের সুফল পাওয়া সম্ভব হয়নি। আমরা তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ তহবিল বিতরণের জন্য নীতিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব করছি। এছাড়া কর ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ, দ্রুত, আধুনিক, যুগোপযোগী এবং সবাইকে কর প্রদানে উদ্বুদ্ধ করার জন্য এ ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ডিজিটাল করার প্রস্তাব করছি।

আলোচনায় ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, কর্পোরেট করহার লিস্টেড ও নন-লিস্টেড কোম্পানির ক্ষেত্রে ২ দশমিক শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করছি, যা বর্তমানে রয়েছে যথাক্রমে ২২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ৩০ শতাংশ। এছাড়াও কর্পোরেট ডিভিডেন্ডের আয়ের ওপর বিদ্যমান ২০ শতাংশ করের পরিবর্তে ১০ শতাংশ কর নির্ধারণের দাবি করেন। প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে স্থানীয় উদ্যোক্তারা পুনর্বিনিয়োগে উৎসাহিত হবে এবং পুঁজিবাজারকে আরও সমৃদ্ধ করবে। 

ভ্যাটের আওতাবহির্ভূত ব্যবসায়ের বার্ষিক টার্নওভারের ঊর্ধ্বসীমা ৩ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৪ কোটি টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করে রিজওয়ানা রাহমান বলেন, সেইসঙ্গে পণ্যের মূল্য সংযোজন অথবা মুনাফা অনুপাতে টার্নওভারের ওপর ট্যাক্স আরোপ করেন। পাশাপাশি তিনি কর ও শুল্ক ব্যবস্থাকে অটোমেশনের আওতায় নিয়ে আসার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

এ সময় এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অনেক ক্ষেত্রে বর্তমানে প্রাপ্ত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। সরকারের বাণিজ্য বিষয়ক সুবিধাদি কাজে লাগিয়ে দেশীয় উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

তিনি বলেন, দেশের করদাতার যেন সহজেই কর দিতে পারে, সেজন্য কর দেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ ও করজাল সম্প্রসারণে এনবিআর কাজ করছে। গত ২ বছরে করের হার বেশ কমানো হয়েছে, যার মাধ্যমে দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বেড়েছে বলে জানান এনবিআর চেয়ারম্যান।

আলোচনা সভায় এনবিআর সদস্য মো. মাসুদ সাদিক (কাস্টমস নীতি), জাকিয়া সুলতানা (ভ্যাট নীতি) এবং সামসুদ্দিন আহমেদ (আয়কর নীতি) উপস্থিত ছিলেন।

আরএম/এসএম