দুই বছর আগে অর্থাৎ ২০১৯ সালে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। এরপর করোনা। সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতে আরেক দফা গ্যাসের দাম বাড়ানো সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলে মনে করছে বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমইএ)।
 
আজ সোমবার (১৪ মার্চ) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে এ এই তথ্য জানানো হয়। এই অবস্থায় সরকার পক্ষ থেকে নতুন করে ১১৬ শতাংশ গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে, সিরামিক খাতের উৎপাদন খরচ বাড়বে ১৮-২০ শতাংশ। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সিরামিক খাত। কারণ, প্রতিযেগিতার বাজারে বিদেশিদের সাথে টিকে থাকা যাবে না। তাই দেশীয় সিরামিক শিল্প রক্ষায় জ্বালানি গ্যাসের দাম না বাড়ানোর আহ্বান জানান বিসিএমইএ সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা।

তিনি বলেন, নতুন করে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি মানেই এই শিল্পের ওপর কাটা গায়ে নুনের ছিটা দেওয়ার মতোই। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই দেশে এখন কোনো ভিক্ষুক নেই,আমাদের কি ভিক্ষুক বানাতে চায়?

তার সাথে একমত পোষণ করে বিসিএমইএর উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার কুতুবউদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশে ফকির-মিসকিন নেই। এখন আমাদের কি ফকির মিসকিন বানাবেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিসিএমইএর উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার কুতুবউদ্দিন আহমেদ, সিনিয়র সহ-সভাপতি মইনুল ইসলাস, সাধারণ সম্পাদক ইরফান উদ্দিন, পরিচালক রাশেদুল ইসলাম ও আব্দুল হাকিম।  

লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিসিএমইএর সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা। এতে বলা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বেই বিভিন্ন জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে দেশে গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে তা হবে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেওয়া।

তিনি বলেন, সিরামিক খাতটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় আমদানি বিকল্প একটি শিল্পখাত। অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে উদ্যোক্তাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় রফতানি এবং আমদানি-বিকল্পপণ্য হিসেবে দেশে ইতোমধ্যেই ৭০টি সিরামিক (টেবিলওয়্যার, টাইলস ও স্যানিটারি ওয়্যার) শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ শিল্পে দেশি-বিদেশি মোট বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

এছাড়া রফতানিখাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পরিমাণ বার্ষিক প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। এ শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে প্রায় ৫ লাখ মানুষের জীবন ও জীবিকা।

সিরাজুল ইসলাম মোল্লা বলেন, দেশের ৬টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছে। এই প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিইআরসি আগামী ২১ থেকে ২৪ মার্চ গণগুনানির দিন ধার্য করেছে। এই উদ্যোগ সফল হলে দেশীয় সিরামিক শিল্প সংকটের মধ্যে পড়বে। এটি সরকারের শিল্পবান্ধব নীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

বিসিএমইএ'র  সাধারণ সম্পাদক ইরফান উদ্দিন বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায় গত চার বছরে তিতাস গ্যাস কোম্পানি ১৫০০ কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে। এরপরেও লোকসানের দাবি তুলে অবিবেচকের মতো আবারও গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব আদৌ যুক্তিসংগত বলে মনে করি না। অতীতে দাম বৃদ্ধির সময় তিতাস কর্তৃপক্ষ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল- চাহিদা মাফিক উপযুক্ত মাত্রায় উন্নতমানের গ্যাস নিরবচ্ছিন্নভাবে সরবরাহ করা হবে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা হচ্ছে প্রয়োজনীয় গ্যাসের প্রেসার ও মান ঠিক রেখে নিরবচ্ছিন্নভাবে উন্নতমানের গ্যাস সরবরাহের সক্ষমতা তিতাস কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত অর্জন করতে সক্ষম হয়নি।

এমআই/এনএফ