মিলে সাপ্লাই অর্ডার (বিক্রয়পত্র) দেওয়ার পর ১৫ দিনের মধ্যে ভোজ্যতেল সরবরাহ করতে হবে। যারা সরবরাহ করবে না, তাদের জরিমানার পাশাপাশি অর্ডার করা তেল বাজেয়াপ্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার।

ভোজ্যতেল নিয়ে মিল পর্যায়ে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় সরবরাহ ও উৎপাদনকারী তিন প্রতিষ্ঠান তলবের ব্যাখ্যা দিতে এলে তাদের সতর্ক করা হয়। প্রতিষ্ঠান তিনটি হলো, এস আলম গ্রুপ, টিকে গ্রুপ ও বাংলাদেশ এডিবল অয়েল (রূপচাঁদা ব্র্যান্ড)।

বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তলব করা তিন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে আসেন। বৈঠক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সংস্থাটির পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায় বিভিন্ন মিলে অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। পণ্য সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন অনিয়ম পাওয়া যায় অভিযানে। 

তিনি বলেন, অভিযুক্ত তিনটি সরবরাহ ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে অনিয়মের ব্যাখ্যা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখানোর জন্য আজ ডেকেছিলাম। তারা আমাদের কাছে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে  পারেনি। তাই কাগজপত্র দেখানোর জন্য তাদের আগামী সপ্তাহে আবারও তলব করা হবে।  

তিনি আরও বলেন, আজ বেশকিছু বিষয়ে আমরা তাদের সতর্ক করেছি। পাইকারি ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছে সবসময় অভিযোগ করেন, সাপ্লাই অর্ডার (বিক্রয়পত্র) দেয়ার পরও মিল মালিকরা চাহিদা অনুযায়ী ভোজ্যতেল সরবরাহ করে না। ফলে বাজারের সংকট তৈরি হয়, দামও বেড়ে যায়। তাই আজ বলেছি, এসও করার ১৫ দিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহ করতে হবে। যারা এটি করবে না তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। জরিমানার পাশাপাশি অর্ডার করা পণ্য বাজেয়াপ্ত করব।  

গত সোমবার (২৮ মার্চ) ভোক্তা অধিদপ্তর থেকে অনিয়মের অভিযোগে তিনটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ব্যাখ্যা দিতে চিঠি দেওয়া হয়। 

চিঠিতে বলা হয়, ১৩ মার্চ চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার মইজ্জারটেকে এস আলমের কারখানা পরিদর্শন করা হয়। ওই সময় তাদের কারখানায় ড্রামের গায়ে পণ্যের নাম, মেয়াদ ও মূল্য উল্লেখ ছিল না। তেল রিফাইনারি ও বোতলজাতকরণ শাখা বন্ধ ছিল। পাঁচ লিটারের মোড়কে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৮৩৫ টাকা লেখা ছিল, যা সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি। 

এরপর ২৭ মার্চ আবারও পরিদর্শন করা হয়। দ্বিতীয়বার দেখা যায়, সাপ্লাই অর্ডারে একক মূল্যের উল্লেখ নেই। নিয়ম বহির্ভূতভাবে এসওগুলো কারখানায় আসার আগে হাতবদল হচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জে টিকে গ্রুপের কারখানায় পাওয়া অনিয়ম সম্পর্কে চিঠিতে বলা হয়, কোম্পানিটি ফেব্রুয়ারি মাসে ২৭ হাজার ৩৭১ টন পাম তেল বিপণন করলেও মার্চে এসে তা কমে ২১ হাজার ১১৯ টনে নেমে আসে। হঠাৎ সরবরাহ কমে যাওয়ার ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য টিকে গ্রুপের চেয়ারম্যান অথবা ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ডেকে পাঠানো হয়।

রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারি মাসে ১৪ হাজার ৩৮ টন তেল সরবরাহ করা হলেও মার্চ মাসে তা ৮ হাজার ২৬৩ টনে নেমে আসে। কোম্পানিটির কাছেও সরবরাহ কমানোর ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।  

এসআই/আরএইচ