দেশে উৎপাদিত প্লাস্টিক পণ্য কোনো লিমিটেড কোম্পানির কাছে বিক্রি বা সরবরাহ করতে গেলে ৭ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) দিতে হয়। এতে বেড়ে যাচ্ছে পণ্যের মূল্য। তাই এআইটি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনকারীরা।

বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) রাজধানীর পল্টনের বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএমিইএ) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। এ সময় ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে বিপিজিএমইএর প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। 

সংবাদ সম্মেলনে বিপিজিএমইএ সভাপতি সামিম আহমেদসহ উপস্থিত ছিলেন, বিপিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এ এস এম কামাল উদ্দিন, ফেরদৌস ওয়াহেদ, শাহেদুল ইসলাম হেলাল, বিপিজিএমইএর সহ-সভাপতি কে এম ইকবাল হোসেন ও পরিচালক মো. এনামুল হক।

বিপিজিএমিইএর পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনে ৩৫ শতাংশের মতো আয়কর দিতে হয়। এর মধ্যে কোনো লিমিটেড কোম্পানির কাছে আমাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি বা সরবারহ করতে গেলে অতিরিক্ত ৭ শতাংশ এআইটি দিতে হচ্ছে। এ কারণে পণ্যের মূল্য বেড়ে যাচ্ছে। যার কারণে অনেক ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নিজেরাই তাদের প্রয়োজনীয় প্লাস্টিকের পণ্য তৈরি করার উদ্যোগ নিচ্ছে। তাই বাজার প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখতে ৭ শতাংশ অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা।   

প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকরা জানান, সম্ভাবনাময় উদীয়মান এ খাত সঠিক করনীতির অভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। এছাড়া পণ্যের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক, ভ্যাটসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অধিক হারে করারোপের কারণে বাজার সম্প্রসারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই এ খাতে কর রেয়াত সুবিধাসহ প্রণোদনা চান ব্যবসায়ীরা।     

লিখিত বক্তব্যে প্লাস্টিক খাতের চিত্র তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, প্লাস্টিক খাতে বর্তমানে সারাদেশে প্রায় পাঁচ হাজার ৩০টির বেশি ক্ষুদ্র, মাঝারি, বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। অভ্যন্তরীণভাবে বর্তমানে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ও বিপণন হচ্ছে। এ খাত থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা রাজস্ব দিয়ে থাকে। নতুন প্রজন্মের ব্যবসায়ী উদ্যোক্তারা এ খাতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসছেন। ফলে সেক্টরের বিকাশ এবং বিস্তৃত হচ্ছে। প্রতিবছর এ সেক্টর থেকে রপ্তানি হয় প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের মতো। রপ্তানি দিন দিন বাড়ছে। প্লাস্টিক সেক্টরে প্রবৃদ্ধি হার গড়ে ২০ শতাংশ।

তারা জানান, রাজস্ব আয় বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। তাই আয়কর এবং মূসকের আওতা সম্প্রসারণ করে এবং কর হার কমিয়ে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য করযোগ্য বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে আয়কর এবং মূসকের আওতায় আনার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কর কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন বাণিজ্য ও পেশাজীবী সংগঠন এবং লাইসেন্স ও নিয়ন্ত্রণকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে দায়িত্ব পালন করার বিশেষ বিধান করা প্রয়োজন। প্লাস্টিক শিল্পের মৌলিক কাঁচামালের আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১ থেকে ৩ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়। আমদানি শুল্ক বর্তমানে ৫ শতাংশ আছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্প্রে হেড/ডিসপেনার হেড প্লাস্টিক, মিস্ট স্প্রেয়ার, স্প্রে গান, ট্রিগার স্প্রে, হ্যান্ড পাম্প প্লাস্টিক, এগ্রিকালচার স্প্রে প্লাস্টিক, স্প্রেড হেড প্লাস্টিক, ডিস্পেন্সার পাম্প প্লাস্টিক, পাম্প ফর শ্যাম্পু অ্যান্ড আদারস প্লাস্টিক, বোতল স্প্রে হেড প্লাস্টিক (এইচ এস কোড ৯৬১৬.১০.০০) ইত্যাদি পণ্য দেশে চাহিদার অতিরিক্ত উৎপাদিত হয়। বর্তমান বাজেটে আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ, এসডি-৩ শতাংশ, ট্যারিফ ভ্যালু ইউএস ডলার ২-২.৫ কেজি নির্ধারিত আছে। আমরা অন্যান্য শুল্ক ঠিক রেখে এসডি-৫০ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি। প্লাস্টিক শিল্পের মৌলিক কাঁচামাল বিদ্যমান শুল্ক হার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার দাবি জানান তারা।

সম্পূরক শুল্ক সংক্রান্ত প্রস্তাব

পলিথিনের তৈরি সব ধরনের প্লাস্টিক ব্যাগ (ওভেনসহ) ও মোড়ক সামগ্রীর ওপর নতুন ভাবে ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এটা প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়।

আমদানি পর্যায়ে তৈরি প্লাস্টিক পণ্যে সম্পূরক শুল্ক অধিকাংশ আইটেমে ৪৫ শতাংশ আরোপ করা আছে। স্থানীয় শিল্প প্রতিরক্ষণের স্বার্থে সম্পূরক শুল্ক উচ্চতর হারে বৃদ্ধি এবং সর্বোচ্চ হারে প্রস্তাব করা হয়।

আয়কর সংক্রান্ত সুপারিশ

রপ্তানিমুখী শিল্প খাতকে আলাদা বা পার্থক্য না করে প্লাস্টিক খাতসহ সকল খাতকে কর্পোরেট ট্যাক্স ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব দেন প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনকারীরা। প্লাস্টিকের শিল্পগুলো দ্বারা দেশে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর থেকে অগ্রিম কর ৩ শতাংশ প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া শিল্প পরিচালনা ব্যয় কমানোর জন্য আমদানি পর্যায়ে শিল্প খাতের প্রদেয় আগাম আয়কর প্রত্যাহার করার প্রস্তাব করা হয়।

মূসক সংক্রান্ত সুপারিশ

প্লাস্টিক খাতের কয়েকটি সাব সেক্টরের মধ্যে খেলনা একটি। এ সাব সেক্টরের বিকাশ ঘটছে  দ্রুত। দেশে খেলনা ব্যবহারের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে আমদানি বিকল্প উন্নতমানের খেলনা প্রস্তুত হচ্ছে ও রপ্তানিও হচ্ছে বিদেশে। রপ্তানিতব্য পণ্যের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে। তাই দেশীয় উৎপাদিত প্লাস্টিক খেলনা সামগ্রীর ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। এর ফলে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ভ্যাটের কারণে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় বিদেশি নিম্নমানের পণ্য বাজারে আসছে। এসব ক্ষুদ্র শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে ভ্যাট প্রত্যাহার আবশ্যক ও প্রজ্ঞাপনটি সংশোধন করার প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া রি-সাইক্লিং দানা থেকে উৎপাদিত পণ্যের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ ভ্যাট আগামী ১০ বছরের জন্য প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়।

এসআই/এসকেডি