সপ্তাহের ব্যবধানে চট্টগ্রামের বাজারে বেড়েছে শসা, বেগুন, ধনেপাতা, লেবু, মুরগিসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, রমজান এলে কিছু পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়, যে কারণে দামও বেড়ে যায়। আর ক্রেতারা বলছেন, কারসাজি করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা। 

আজ রোববার চট্টগ্রামের রেয়াজউদ্দিন বাজারে প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়; যা গত সপ্তাহে ২০ থেকে ২৫ টাকায় কিনেছেন ক্রেতারা। এছাড়া কয়েকদিন আগে শসা ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হলেও আজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। রিয়াজউদ্দিন বাজারে গত সপ্তাহে  ধনেপাতা ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা। আজ তা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ৬০ টাকায়। এলাচি লেবু বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা ডজন। আর কাগজি লেবুর ডজন বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে লেবুর দাম বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকার ওপরে। গত কয়েক দিন ধরে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ১৬-১৭ টাকায়। কিন্তু আজ ৩ টাকা  বেড়ে আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা কেজিতে।

রিয়াজউদ্দিন বাজারের ধনেপাতা ব্যবসায়ী আহম্মেদ নুর ঢাকা পোস্টকে বলেন, রমজানের কারণে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়ে গেছে ধনে পাতার।

জোবায়ের নামে এক লেবু ব্যবসায়ী ঢাকা পোস্টকে বলেন, লেবু ক্রয় করার সময় বেশি দামে কিনতে হয়েছে।  তাই আমাদেরকে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়েছে। এছাড়া এখনও লেবুর মৌসুম শুরু হয়নি। বৃষ্টি  শুরু হলে লেবুর দাম কমে যাবে।

বেগুন বিক্রেতা মো. খায়রুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, রমজান এলে বেগুনের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। যে কারণে চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে দামও বেড়ে যায়।  

এ বাজারের শসা বিক্রেতা মো. আকিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, কয়েকদিন ধরে শসার দাম বাড়তির দিকে। বাজারে শসার চাহিদা বেড়ে গেছে। আমরা আড়ত থেকে বেশি দামে ক্রয় করছি, যে কারণে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে ৩০/৪০ টাকার শসা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজিতে।

চট্টগ্রামের কাজির দেউড়ী বাজারে শুক্রবার যে ধনেপতা বিক্রি হয়েছিল ৮০ টাকা কেজি,আজকে তা বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা। বড় লেবু একডজন বিক্রি  হচ্ছে ২৪০ টাকা। গত সপ্তাহে বড় আকারের একটি লেবু বিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ১২ টাকায়। আর আজ বিক্রি হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ টাকায়। 

মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। শসা বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। 

চট্টগ্রামে কাজির দেউড়ী বাজারের সবজি বিক্রেতা  হারাধন বাবু ঢাকা পোস্টকে বলেন, ধনেপাতার দাম হঠাৎ করে বাড়িয়ে দিয়েছে আড়তদাররা। তাই আমাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। গতসপ্তাহে লেবুর দাম কমছিল। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। আমাদের বেশি দামে ক্রয় করতে হয়েছে। তাই বেশি দামে বিক্রি করছি।

কাজির দেউড়ী বাজারে আসা এহসান নামের এক ক্রেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাজারে লেবু, শসা, ধনেপাতার দাম অনেক বেড়ে গেছে। বাজারে কারো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম নিচ্ছে।

প্রবাসী মোহাম্মদ শিপনের সঙ্গে কথা হয় কাজির দেউড়ী বাজারে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, সারাবিশ্বে রমজান উপলক্ষে জিনিসের দাম কমে। কিন্তু বাজারে এসে দেখলাম সপ্তাহের ব্যবধানে সবকিছুর দাম বেড়েছে। 

রিয়াজউদ্দিন বাজারে বাজার করতে আসা মো. সারুয়ারে আলম নামে এক ক্রেতা বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বাজারে শসা, বেগুনসহ সব ধরনের পণ্য প্রচুর পরিমাণে থাকলেও দাম বাড়ছে। বাজারে কোনো ধরনের মনিটরিং দেখিনি। রমজানের প্রথম দিকে নিত্য প্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম বাড়বে, এটা মনে হয় অলিখিত নিয়ম হয়ে গেছে। 

গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে পোল্ট্রি মুরগির দাম। গত সপ্তাহে কেজিতে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা দরে বিক্রি হওয়া মুরগি আজ ১৬৫-১৭০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে কাজির দেউড়ী বাজারে ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাজির দেউড়ী বাজারের এক মুরগী ব্যবসায়ী বলেন, দুইদিনে মুরগির দাম বেড়েছে। সোনালী মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকায়, আর লাল মুরগি ২২০ টাকা কেজিতে।

এছাড়া চট্টগ্রামের রিয়াজুদ্দিন বাজারে মহিষের মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা কেজি, আর হাড়সহ মাংস ৬৫০ টাকা কেজি। আর গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ টাকা কেজিতে। মাংস ব্যবসায়ী বেলাল উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাংসের চাহিদা বেড়েছে, কিন্তু  বাজারে মহিষ তেমন নেই। সে কারণে দাম কিছুটা বেড়েছে।

কেএম/এনএফ