সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে ভোজ্যতেল বিক্রি করায় পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে চার লাখ টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

শনিবার (৯ এপ্রিল) রাজধানীর শাহ আলী এলাকায় ভোজ্যতেলের পাইকারি বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার।

অভিযান পরিচালনা করেন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল, ফাহমিনা আক্তার ও মাগফুর রহমান। এতে সার্বিক সহযোগিতা করেন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) নারী সদস্যরা।

অভিযান প্রসঙ্গে অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার ঢাকা পোস্টকে বলেন, জানতে পেরেছি, সয়াবিন তেলের দাম মিলে দাম স্বাভাবিক থাকলেও পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত হতে তাৎক্ষণিকভাবে আজ অভিযান পরিচালনা করেছি।

প্রথমে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে অভিযান চালানো হয়। সেখানে দাম স্বাভাবিক পাই। পরে শাহ আলী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। সেখানে পাইকারি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বেশি দামে ভোজ্যতেল বিক্রির প্রমাণ পাওয়া যায়। এ অপরাধে পাঁচ ব্যবসায়ীকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে তিন প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ টাকা করে আর বাকি দুই প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।

তিনি বলেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে যে কেউ যদি বেশি নেয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। যে অনিয়ম করবে তাকে অর্থদণ্ডসহ সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবে। এছাড়া সিন্ডিকেট করে কেউ যদি দাম বাড়ানোর চেষ্টা করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ আইনে মামলা করব। আমরা সব ব্যবসায়ীকে বলতে চাই, আইনের মধ্যে থেকে ব্যবসা করুন এবং সরকারি বিধি নিষেধ মেনে চলুন। অনিয়ম করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

শনিবার সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ ধরে সয়াবিন তেল দিতে গড়িমসি করছে পাইকার ও ডিলাররা। একইসঙ্গে দামও বেশি নিচ্ছে। রমজান শুরুর পর থেকে গত এক সপ্তাহে প্রতি লিটারে তেলের দাম বেড়েছে ৫ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল বেড়েছে ৮ থেকে ১০ টাকা।

মুগদার মুদি ব্যবসায়ী আল-আমিন জানান, সয়াবিন তেলের দামটা একটু বাড়তির দিকে। রমজানের এক-দুই দিন আগে থেকে বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি করেছি ১৬৫ টাকা দরে। মাঝে ১৬০ টাকায় নেমেছিল। গত দুই-তিন ধরে আবার দাম বেড়েছে। এখন আবার ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি করছি। দুই লিটার ৩২৮ ছিল এখন ৩৩০ টাকা। আর পাঁচ লিটার বিক্রি করেছিলাম ৭৭০ টাকায় এখন আবার ৭৮০ বিক্রি করতে হচ্ছে।

সব চেয়ে বেশি বেড়েছে খোলা সয়াবিনের দাম। কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। আজ ভালো মানের খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করছি ১৬৫ টাকায়। এটি গত সপ্তাহে ১৫৬ থেকে ১৫৭ টাকা ছিল।

সরকার তেল আমদানিতে ভ্যাট ও দাম কমালেও ব্যবসায়ীরা কৌশলে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যেও এর সত্যতার প্রমাণ মিলেছে। রাজধানীর শাহজাহানপুর, মালিবাগ, কারওয়ান বাজার, বাদামতলী, সূত্রাপুর, শ্যামপুর, কচুক্ষেত, মৌলভীবাজার, মহাখালী, উত্তরা আজমপুর বাজার, রামপুরা ও মিরপুর ১ নাম্বার বাজার থেকে তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সরকারি এ সংস্থাটি।

টিসিবি তথ্য অনুযায়ী, ৯ এপ্রিল ঢাকার বাজারে খুচরা এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৬৮ টাকা। এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৬৫ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৫৮ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৫৪ টাকা। এছাড়া প্রতি লিটার পামওয়েলের (খোলা) দাম ১৪৬ টাকা, যা আগের সপ্তাহে ছিল ১৪৩ টাকা।

এসআই/এমএইচএস