এখন ব্যবসায় প্রতিবেদনে রাজনীতিকেও গুরুত্ব দিতে হবে
এখন অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে রাজনৈতিক অনেক ব্যক্তিরা জড়িয়ে পড়ছেন। বিভিন্নভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নানা আর্থিক অনিয়ম করছেন। তাই আগামীতে ব্যবসায় প্রতিবেদন করতে হলে রাজনীতিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। একই সঙ্গে সাংবাদিকদের আগামীতে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় খাত সংশ্লিষ্ট জ্ঞান অর্জন ও টেকনিক্যাল বিষয়ে অভিজ্ঞ হতে হবে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষ বুঝে এমন সহজ ও মার্জিত ভাষায় অর্থনৈতিক প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে।
শনিবার (১৬ এপ্রিল) দি ডেইলি স্টার সেন্টারে আয়োজিত ‘ব্যবসায়িক সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ এবং প্রতিবেদনে নৈতিকতা ও শিষ্টাচার’ শীর্ষক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। মতবিনিময় সভাটি যৌথভাবে আয়োজন করে ‘ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিসোসের্স ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (এমআরডিআই)’ ও ‘দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন’।
বিজ্ঞাপন
এমআরডিআই নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান সভাপতিত্বে সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রথম আলোর বিশেষ বার্তা সম্পাদক শওকত হোসেন মাসুম।
তিনি বলেন, অন্যদের সঙ্গে বাণিজ্য সাংবাদিকতার পার্থক্য থাকতে হবে। সঠিক প্রশ্ন করার জ্ঞান। খবর যোগ্য উত্তর চিনতে পারার দক্ষতা। এমনভাবে লিখতে হবে যাতে করে যাদের এ বিষয়ে জ্ঞান নেই, তারাও যেন সহজে বুঝতে পারে।
বিজ্ঞাপন
প্রবন্ধে শওকত হোসেন উল্লেখ করেন, অর্থনীতির মাঠ আরও বড় হয়েছে। বাংলাতেও এখন বিজনেস ডেইলি আছে। ছাপা পত্রিকার রাজত্বে ভাগ বসিয়েছে টেলিভিশন মাধ্যম। বর্তমান ডিজিটাল দুনিয়ায় সংবাদ পাওয়ার উৎস অনেক বেড়েছে, তবে প্রশ্ন হচ্ছে বাণিজ্য সাংবাদিকতা কি মূল ধারায় যেতে পেরেছে। পারলে কতটা। আরও বড় প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কোথায় যেতে চাই।
তিনি বলেন, আমরা যদি সারা বিশ্বের দিকে তাকাই, তাহলে দেখি গত ৩০ বছরে বিশ্বজুড়েই বাণিজ্য সাংবাদিকতায় নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে। মূলত তিনটি প্রবণতাই বাণিজ্য সাংবাদিকতায় বড় পরিবর্তন ঘটিয়েছে।
এক- ঠান্ডা যুদ্ধের অবসান। এর ফলে পুঁজিবাদী অর্থনীতি ভালো, না সমাজতন্ত্র- সেই আলোচনা কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।
দুই- পুঁজি ব্যবহারের আলোচনা থেকেই এরপর বিশ্বজুড়ে আর্থিক সম্পদ বা ফিন্যান্সিয়াল অ্যাসেটের বিস্তার ঘটতে থাকে।
তিন- এত কিছুর মধ্যেও দেখা গেল অর্থনীতি সব সময় এভাবে চলছে না; নানা ধরনের সংকট, বাধা, মন্দা, উত্থান-পতন এসব দেখা দিচ্ছে। আর এসব ঘটনা সমাজে, রাজনীতিতে, দেশে-দেশে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া তৈরি করছে।
তিনি বলেন, ১৯২৯ সালের মহামন্দার পর বাণিজ্য সাংবাদিকরা সবচেয়ে বেশি সমালোচনার মুখে পড়েন ২০০৮ সালের বিশ্ব মন্দার ঘটনায়। কারণ এ রকম এক বড় মন্দার পূর্বাভাস কেউই দিতে পারেননি। বাণিজ্য সাংবাদিকরা সে সময় অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। সুতরাং নতুন করে আবার নিজেদের প্রস্তুত করতে হয়েছে। এখন তো আবার এক সংকটের মধ্যে পুরো বিশ্ব। এ সময়টাই তো অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের জন্য স্বর্ণসময় হওয়ার কথা।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের সম্পাদক লিওনেল বারবার এর বরাদ দিয়ে শওকত হোসেন মাসুম জানান, একটা ভালো সংবাদের চাহিদা সব সময় ছিল। তবে এখন চাহিদা অনেক বেশি। বিশেষ করে ইন্টারনেট ভালো বাণিজ্য সংবাদের চাহিদা বহু গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
লিওনেল জানিয়ে ছিলেন, ছাপা পত্রিকার আবেদন সহজে ফুরাবে না। তবে এ জন্য লেখাটি হতে হবে সুসম্পাদিত ও চোখা, সঙ্গে থাকবে বুদ্ধিদীপ্ত বিশ্লেষণ এবং কর্তৃত্বপূর্ণ মন্তব্য।
ভবিষ্যতের বার্তাকক্ষ এবং সাংবাদিকতা কেমন হবে এ বিষয়ে সাংবাদিক ও ট্রেইনার স্টিভ ইয়েলভিনংটন ২০১৮ সালে হায়দ্রাবাদে এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, সামনের দিনে ২০২০ সালে একজন সাংবাদিককে হতে হবে এক ব্যক্তির ব্যান্ড (ওয়ান ম্যান ব্যান্ড) দলের মতো। তাকে একই সঙ্গে অনেকগুলো কাজ করতে হবে। তিনি লিখবেন, মোবাইলে নিউজ পাঠাবেন, ছবি তুলবেন, ভিডিও করবেন, ডেটা জার্নালিজম করবেন, সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং ও মার্কেটিং জানবেন, বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করবেন। সর্বোপরি অন্যের সঙ্গে মিলেও কাজ করবেন।
বাণিজ্য সাংবাদিকদেরও কিন্তু এ রকমই হতে হবে। তবে মূলকথা হলো, কেবল সুসাংবাদিকতাই টিকিয়ে রাখবে সাংবাদিকতা। আর বাণিজ্য সাংবাদিকতা তো এর বাইরে নয়। তবে এ জন্য চর্চা লাগবে। আমার পরের আলোচনা বাণিজ্য সাংবাদিকতার নীতি, নৈতিকতা ও শিষ্টাচার। এটা গুরুত্বপূর্ণ এই জন্য যে এর ওপরই নির্ভর করছে বাণিজ্য সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মো. তৌফিক ইসলাম খান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের নির্বাহী পরিচালক তালাত মাহমুদ, ঢাকা ট্রিউবিউনের নির্বাহী সম্পাদক রেজা আহমেদ, দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক শামীম জাহেদী, নেক্সাস টিভির চিপ অপারেটিং অফিসার মনজুর আহমেদ, দৈনিক সমকালের বিজনেস এডিটর জাকির হোসেন প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, প্রতিটি অর্থনৈতিক প্রতিবেদনে ক্ষেত্রে তথ্যের সঠিক প্রয়োগ করতে হবে। পাঠক চায় নতুনত্ব। নতুন কিছু তথ্য। বড় মিডিয়া হাউজ বেশিরভাগই ব্যবসায়ী গ্রুপের। মালিকপক্ষের কারণে অনেক তথ্যই প্রকাশ করা সম্ভব না। এ বিষয়টিও এখন গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের সুশাসন নিশ্চিত আছে কি না প্রতিবেদন লেখার ক্ষেত্রে বিষয়টির বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
এ সময় এমআরডিআই নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান বলেন, সাংবাদিকতায় বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা থাকবে, চ্যালেঞ্জ থাকবে। সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েই সামনে যেতে হবে। এটার নামই সাংবাদিকতা।
এসআই/এসএসএইচ