করের আওতা বাড়ে না অথচ ধনীদের সংখ্যা বেড়েই চলছে, এ বৃদ্ধির হার পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ ও এডুকেশন ওয়াচের চেয়ারপারসন ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ।

শনিবার (২৩ এপ্রিল) রাজধানীর গুলশানে স্পেক্ট্রা কনভেনশন সেন্টারে বাজেট বিষয়ক এক সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

গণসাক্ষরতা অভিযান, এডুকেশন ওয়াচ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) যৌথভাবে সভাটি আয়োজন করে।

শিক্ষার বাজেট : বাজেটের শিক্ষা এই প্রতিপাদ্য নিয়ে “ শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন : কোথায় আছি আমরা” শীর্ষক সভা আয়োজন করা হয়। সভাটি সঞ্চালনা করবেন গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী।

খলীকুজ্জমান বলেন, আমরা শিক্ষানীতিতে দেশের বাজেটের আড়াই শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দের জন্য বলেছিলাম। আমরা ধরে নিয়েছিলাম শিক্ষানীতি ১০ বছরে বাস্তবায়িত হবে, কিন্তু হয়নি। আশা করেছিলাম ১০ বছরে বাজেটের সাড়ে ৪ শতাংশ শিক্ষা বরাদ্দ হবে। এখন উল্টো হচ্ছে।  ভুটানে শিক্ষাখাতে জাতীয় বাজেটের ৭ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়, ভারতে পৌনে ৪ শতাংশ,  এমনকি পাকিস্তানেও আড়াই শতাংশ বরাদ্দ পায় শিক্ষা খাত। সেখানে বাংলাদেশে দেড় শতাংশ। একেবারেই তলানিতে। বরাদ্দ দিয়েও কী হবে আমরা খরচ করতেও পারি না। বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশি দুর্বলতা। 

তিনি বলেন, প্রতি বছরই বলে যাচ্ছি শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াও বাড়াও। কিন্তু সরকারকে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হলে বিদেশ থেকে ঋণ নিতে হবে। বিকল্প আর একটা পদ্ধতি হচ্ছে করের আওতা বাড়ানো। করের আওতা বাড়ে না কিন্তু ধনীদের সংখ্যা বেড়েই চলছে। বৃদ্ধির হার পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। তারা আবার কর দিতে চায় না। বরং নানাভাবে কর মওকুফ চায়, প্রণোদনা চায়। আবার আদায় করেও নেয়। কারণ তারা শক্তিশালী। তারা আদায় করতে পারে। সেজন্য সরকারকে করের আওতা বৃদ্ধিতে অনেক বেশি নজর দিতে হবে। 

আর একটি সমস্যা হচ্ছে সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা মধ্যে এক ধরনের আত্মতুষ্টি কাজ করছে। অনেক এগিয়েছি। আর দরকার নেই। আমাদের আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

স্থায়ী শিক্ষা কমিশনের দাবি জানিয়ে কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, আমরা বারবার স্থায়ী শিক্ষা কমিশনের দাবি জানিয়ে আসছি। এটা থাকলে কোভিডকালীন সময়ে সংকটেও ভালো কাজ করতে পারত। শিক্ষা খাতে প্রতিটি সেক্টর ধরে ধরে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তার ব্যবস্থাপনার কাজটি করতে পারত। 

সিপিডির রিসার্চ ফেলো মুনতাসির কামাল সভায় মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। তার প্রবন্ধে বলা হয়, শিক্ষা বাজেটে বরাদ্দ বড় না কারণ হিসাবে সাধারণত বলা হয় এ খাতে রাজস্ব আহরণ সে অর্থে হয় না। সেই রাজস্ব আহরণের দিকে খেয়াল করলে দেখা যায় এই খাত থেকে রাজস্ব আহরণ ক্রমাগত কমে যাচ্ছে। প্রতি বছর রাজস্ব আহরণে যে লক্ষ্যমাত্রা থাকে তা কখনই অর্জিত হয় না। এক্ষেত্রে কর আহরণের যে উদ্যোগগুলো সেগুলো চালিয়ে যেতে হবে। বিশেষ করে কর ফাঁকির যে প্রবণতা রয়েছে সেগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে।

সভায় শিক্ষকদের দুরবস্থা বিশেষ করে ননএমপিও শিক্ষকদের বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়ার দাবি করা হয়। 

অনুষ্ঠানে সিলেটের কুলাউড়া চা শ্রমিক ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী লালন রাজহোর নিজের আর্থিক টানাপোড়নের বিষয়টি উপস্থাপন করে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে সরকারের সাহায্য চেয়েছেন।

নবম শ্রেণি থেকে ঝরে যাওয়া মোহাম্মদপুর থেকর শিক্ষার্থী জাকিয়া আক্তার বলেন, বাবা ছোট দোকানদার ছিলেন। কোভিডের কারণে দোকান ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। বর্তমানে পরিবারটি ঋণগ্রস্ত। সংসারের খরচ চালাতে মা বাসায়-বাসায় কাজ করছেন। সংসারকে সাহায্য করতে স্কুল ছেড়ে নিজেই কারখানায় কাজ করছেন। তিনি আবার স্কুলে ফিরতে চান। সে কারণে সরকারের সহায়তা চাচ্ছেন জাকিয়া।

শিক্ষার্থী তানিজিমা আক্তার, হাজিরাবাগ বস্তি থেকে এসেছি। পরিবারের আর্থিক সমস্যার কারণে লেখাপড়া ছাড়তে হয়েছে। বাবা বিয়ে দিয়ে দেন। আমি আবার পড়াশুনা করতে চাই।

আরএম/এসকেডি