বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক

‘সরকারের উচ্চপদে যাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে বিজিএমইএকে ব্যবহার করছে নেতারা’— সংগঠনটির সভাপতি রুবানা হকের এমন মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী। রুবানা হকের এমন বক্তব্যে পোশাক খাত এবং তিনি নিজে ছোট হয়েছেন।

গতকাল সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর গুলশানে বিজিএমইএ’র সম্মিলিত পরিষদের নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধন ও দোয়ামাহফিলে সালাম মুর্শেদী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ২০২১-২৩ অর্থবছ‌রে বিজিএমইএ নির্বাচনে সম্মিলিত পরিষদের প্যা‌নেল লিডার হিসে‌বে জায়ান্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক হাসানকে প‌রিচয় ক‌রি‌য়ে দেওয়া হয়।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস, সাবেক সভাপতি কাজী মুনির, বিকেএমইএ’র জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মো. হাতেম, পরিচালক ফজলে শামীম এহসানসহ শীর্ষ ব্যবসায়ীনেতারা উপস্থিত ছিলেন।

রুবানার সমালোচনায় সম্মিলিত পরিষদের প্রধান নির্বাচন সমন্বয়ক সালাম মুর্শেদী বলেন, তৈরি পোশাক খাত থেকে এখন ১৫ জন এমপি ও চারজন মন্ত্রী সরকারের প্রতিনিধিত্ব করছেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম আমাদের পোশাক খাতের উদ্যোক্তা এবং বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি। সাবেক মেয়র প্রয়াত আনিসুল হক (রুবানা হকের স্বামী) বিজিএমইএ’র সভাপতি ছিলেন। আমাদের যোগ্যতা আছে বলেই আমরা নেতৃত্ব দিচ্ছি। দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান তৈরিতে আমাদের সদস্যরা কাজ করছেন। সরকারের উচ্চপদে যাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছি— এটা বলে তিনি এ খাতকে ছোট করেছেন। সংগঠনের সভাপতি হিসেবে নিজেকেও তিনি ছোট করেছেন।

বিজিএমইএ'র সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী

অতীতে বিজিএমইএ সদস্যরা সম্মিলিত পরিষদের ওপর আস্থা রেখেছিলেন— উল্লেখ করে সালাম মুর্শেদী বলেন, করোনায় পোশাক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশ্বের অর্থনীতি মুমূর্ষু অবস্থায়। তাই আগামী নির্বাচন বিজিএমইএ সদস্যদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। এবারও তারা আমাদের ওপর আস্থা রাখবেন বলে বিশ্বাস করি। সমঝোতায় অতীতে দুটি বোর্ড হয়েছে। আমরা দেখেছি, করোনাকালে সদস্যরা সেবা পাননি। বর্তমানে দায়িত্বে থাকা বোর্ডের সদস্যরা অফিসও করেননি। অথচ আমি প্রধানমন্ত্রীর গঠিত টাস্কফোর্সের ১৮টি মিটিংয়ে অংশ নিয়েছি। আমরা তো ঘরে বসে থাকিনি।

বিজিএমইএ’র আগামী নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে প্রত্যাশা করে তিনি আরও বলেন, এ নির্বাচন আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ডে হবে। তবে নির্বাচন বোর্ড গঠনের পর এ বিষয়ে কাজ করার ক্ষমতা কারও নেই। তাই বায়োমেট্রিক ভোটার কার্ডের যে উদ্যোগ বর্তমান বোর্ড নিয়েছে তা গঠনতন্ত্রবিরোধী। 

ফারুক হাসান সম্পর্কে সালাম মুর্শেদী বলেন, ফারুক হাসান একজন পরীক্ষিত নেতা। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকপর্যায়ে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক সমস্যা মাথায় রেখে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ খাতকে ঘুরে দাঁড়াতে ফারুক হাসান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন।

ফারুক হাসান বলেন, ২০২১ সালটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সম্মিলিত পরিষদ থেকে নির্বাচিত সভাপতিরা সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বশীল জায়গায় আছেন। ভোটাররা আমাকে নির্বাচিত করলে সংকট মোকাবিলায় কাজ করতে সুবিধা হবে। আমি নির্বাচিত হলে নীতিসহায়তার বিষয়ে জোর দেব। বিশ্বের ৭৪ শতাংশ ম্যান মেইড ফাইবার দিয়ে পোশাক উৎপাদন হয়। অথচ আমরা ৭০ শতাংশ কটননির্ভর পণ্য উৎপাদন করি। আমরা সেটা এগিয়ে নিয়ে যাব। অনেকেই বলে থাকেন, আমরা কেবল বেসিক আইটেম করি। কিন্তু অনেকেই পণ্যে ভিন্নতা এনেছে। আমরা এগুলো শেয়ারের উদ্যোগ নেব।

চতুর্থ শিল্পবিপ্লব আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ— উল্লেখ করে উদ্যোক্তা ফারুক হাসান বলেন, আমরা পণ্য উৎপাদনে আধুনিকতার ছোঁয়া আনব। একইসঙ্গে শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করব। সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ভালো করব। এ খাতে অনেকগুলো সংগঠন আছে। সেগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও উন্নত করব।

তিনি আরও বলেন, আগামী ২০২৭ সালে এলডিসি থেকে গ্রাজুয়েশনের কারণে (স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত) ইইউসহ অন্যান্য দেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা হারাব। আমার সঙ্গে ইইউ-আমেরিকার কূটনীতিকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক আছে। এর আগে আমি যখন বোর্ডে ছিলাম তখনও জিএসপি প্লাস নিয়ে কাজ করেছি। এবারও এ আলোচনা এগিয়ে নিতে কাজ করব। গত দুই বছর নতুন বাজার সেভাবে বাড়েনি। আমরা সেটি বাড়াতে কাজ করব। আগের বোর্ড যেসব ভালো উদ্যোগ নিয়েছে সেগুলো আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব। গণমাধ্যমের সঙ্গে বিজিএমইএ’র একটি দূরত্ব তৈরি হয়েছে। আমরা এটি দূর করে তাদের সহায়তা নিয়ে এগিয়ে যাব।

এসআই/এমএআর/