দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে চমক দেখিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রবাসীরা। সব সময় শীর্ষে থাকা সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রকে ডিঙিয়ে প্রবাসী আয়ে শীর্ষে উঠে এসেছে দেশটির নাম। রেমিট্যান্স নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, যেসব দেশ থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স আসে চলতি বছরের মে মাসে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। দেশটি থেকে ৩৩ কোটি ৮৬ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা এসেছে। একক মাস হিসেবে দেশটি থেকে আসা প্রবাসী আয়ের অঙ্ক এ যাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ।    

শীর্ষে থাকা সৌদি আরব প্রবাসী আয়ের তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে নেমে গেছে। মে মাসে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৩২ কোটি ৯৯ লাখ ডলার। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে বরাবরই সৌদি আরব থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসছে।

একক মাস হিসেবে তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। দেশটির প্রবাসীরা মে মাসে ২৭ কোটি ৩২ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন। চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে রয়েছেন যুক্তরাজ্য ও কুয়েত প্রবাসীরা। মে মাসে দেশ দুটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে যথাক্রমে ১৬ কোটি ৬৫ লাখ ও ১৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

আরব আমিরাত থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক মাসে বিশেষ কোনো কিছু ঘটে থাকলে রেমিট্যান্স বাড়তে পারে এটা স্বাভাবিক। তবে দেখার বিষয়, আসলে কেন বাড়ছে। এটা যদি দীর্ঘ মেয়াদি হয় তাহলে দেখতে হবে পেছনের কারণটা কী?

তিনি বলেন, করোনার সময় প্রবাসী যাওয়ার হার কম ছিল, এটা বাড়ছে। গত বছর দেশ থেকে ৬ লাখের বেশি কর্মী কাজের জন্য বিভিন্ন দেশে গেছেন। এ বছরও প্রথম ৪ মাসে চার লাখের বেশি গেছেন। এর মধ্যে আমিরাতে বেশি সংখ্যক প্রবাসী গেছেন কি না এটা দেখার বিষয়। তবে কারা টাকা পাঠাচ্ছেন, কাঠামোগত কোনো পরিবর্তন বা কাকতালীয়ভাবে কোন কিছু ঘটছে কি না সেটা দেখতে হবে। এজন্য একমাস বিবেচনায় নিলে হবে না আরও দুই-তিন মাস দেখতে হবে। এরপরই প্রকৃত বিষয়টি বোঝা যাবে।    

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, সবশেষ গত মে মাসে ১৮৮ কো‌টি ৫৩ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। বাংলাদেশি মুদ্রায় বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৮৯ টাকা ধরে) এই অর্থের পরিমাণ ১৬ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা। এ অঙ্ক আগের মাসের চেয়ে প্রায় ১২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার কম। এপ্রিলে রেমিট্যান্স এসেছিল ২০১ কোটি ৮ লাখ ডলার। যা আগের বছরের মে মাসের তুলনায় ২৮ কোটি ৫৭ লাখ ডলার কম। গত বছর মে মাসে প্রবাসীরা পাঠিয়েছিলেন ২১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার।    

এর আগে অবাধে যত খুশি তত রেমিট্যান্সে পাঠানোর পথ সহজ করে দিয়ে গত ২৩ মে সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে এখন পাঁচ হাজার ডলারের উপরে বা ৫ লাখ টাকার বেশি রেমিট্যান্স আসলেও কোন ধরনের কাগজপত্র ছাড়াই প্রণোদনা পাচ্ছেন প্রবাসীরা। আগে পাঁচ হাজার ডলারের বেশি রেমিট্যান্সের বৈধ কাগজপত্র জমা দেওয়া বাধ্যবাধকতা ছিল। কিন্তু তারপরও বাড়েনি রেমিট্যান্স প্রবাহ।

বৈদেশিক মুদ্রার সংকট নিরসনে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ডলারের বিপরীতে টাকার মান ধারাবাহিকভাবে কমাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলারে কিনতে খরচ করতে হচ্ছে ৯১ টাকা ৯৫ পয়সা। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারি আমদানি বিল মেটাতে এই দরে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে। নিয়ম অনুযায়ী এটাই ডলারের আনুষ্ঠানিক দর।

তবে বিভিন্ন ব্যাংক ও কার্ব মার্কেটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আজ ব্যাংকগুলো আমদানি বিলের জন্য নিচ্ছে ৯৪ থেকে ৯৫ টাকা, নগদ ডলার বিক্রি করছে ৯৬ থেকে ৯৭ টাকা আর ব্যাংকের বাইরে খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে ডলার বিক্রি হয় ৯৭ থেকে ৯৮ টাকা।

মঙ্গলবার গুলশান আইডিয়াল মানি এক্সচেঞ্জ-এর স্বত্বাধিকারী মো. রাসেল ঢাকা পোস্টকে জানান, তারা আজ ডলার বিক্রি করছেন ৯৭ টাকা ৩০ পয়সা আর কিনেছেন ৯৬ টাকা ৮০ পয়সায়। 

অন্যদিকে মার্স মানি এক্সচেঞ্জ হাউজ বিক্রি করছে ৯৭ টাকা ২০ পয়সা, তারা কিনছে ৯৬ টাকা ৫০ পয়সায়।

এসআই/এসকেডি