২০২২-২৩ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৩১ দশমিক ৪২ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বৃহস্পতিবার (৯ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনকালে এ তথ্য জানান অর্থমন্ত্রী। ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ স্লোগান নিয়ে ৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেন তিনি।

জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অর্থমন্ত্রী বলেন, নতুন অর্থবছরে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সরকারি ব্যবস্থাপনায় চাল-গমের ক্রয়-বিক্রয় ব্যবস্থা অব্যাহত রাখব। তাই অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৩১ দশমিক ৪২ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংগ্রহের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি।

অন্যদিকে বাজেটে একই সময়ে খাদ্যশস্য বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ লাখ ৯৫ লাখ মেট্রিক টন। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারি পর্যায়ে খাদ্যশস্য সংরক্ষণের ধারণ ক্ষমতা বাড়াতে সরকার কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

মুস্তফা কামাল বলেন, আমরা আশা করছি, ২০২২-২৩ অর্থবছরে খাদ্য গুদামের ধারণ ক্ষমতা ২৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করা সম্ভব হবে। এছাড়া অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী খাদ্যশস্য সংরক্ষণ ক্ষমতা ৩৭ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীতকরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। খাদ্যশস্যের সংরক্ষণ সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বিদ্যমান গুদামগুলোর ধারণ ক্ষমতা বজায় রাখতে নতুন উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, আলুর বাম্পার উৎপাদনের ক্ষেত্রে কৃষকরা যাতে স্বল্পমেয়াদে (৩-৪ মাস) ও সাশ্রয়ী ব্যয়ে তা সংরক্ষণ করতে পারেন, সেজন্য বাস্তুভিটাতেই ক্ষুদ্র আকৃতির (২৫ ফুট লম্বা ও ১৫ ফুট প্রস্থের) ‘প্রাকৃতিক আলু সংরক্ষণাগার’ স্থাপনে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে ৭৮৬ কোটি টাকার প্রথম বাজেট ঘোষণা করেন তাজউদ্দীন আহমদ। সেই থেকে যাত্রা শুরু হয়ে আজ ৫১তম বাজেট পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে জাতীয় সংসদে। নতুন এ বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এতে মূল্যস্ফীতি ধরা হবে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।

এবারের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বেশি। আর সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৮৪ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা বেশি। আগামী অর্থবছরের বাজেটে বড় ব্যয়ের বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের আয়ের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা হতে যাচ্ছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। যেখানে বাজেটে অনুদান ছাড়া ঘাটতির আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। আর অনুদানসহ ঘাটতি থাকবে ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।

২০২২-২৩ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে আয়ের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। যা চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের তুলনায় ৪৪ হাজার ৭৯ কোটি টাকা বেশি। প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারের আয়ের খাতগুলো থেকে কর বাবদ ৩ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা আয় করার পরিকল্পনা করছে সরকার। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে এনবিআরকে ৪০ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দিচ্ছে সরকার। এর মধ্যে এনবিআর বহির্ভূত কর থেকে আয় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া কর ছাড়া আয় ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি। আর বৈদেশিক অনুদান থেকে আয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২৭১ কোটি টাকা।

এসআর/এমএইচএস