বিদ্যালয়ে যেসব শিশুরা লেখাপড়া করতে আসে তাদের অধিকাংশই সুস্থ স্বাভাবিক শিশু। এদের বাইরে যারা বিদ্যালয়ে আসতে পারে না তাদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন সমস্যা। কেউ দরিদ্রতা-সামাজিক চাপে কেউ শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধকতার কারণে। এসব শিশুদেরই সাধারণভাবে সুবিধাবঞ্চিত ও বিশেষ শিশু বলা হয়।

এবারের বাজেটে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে গণশিক্ষায় বাড়ানো হয়েছে বাজেট বরাদ্দ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপনকালে এ কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বৃহস্পতিবার (৯ জুন) জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষায় ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি। যা বর্তমান ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ছিল ২৬ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা।

তিনি বলেন, এবারের বাজেটে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। আমরা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুসহ ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সমাজের সকল শিশুদের মূলধারার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া নিশ্চিতকল্পে একীভূত শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছি।

মাঠপর্যায়ে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের প্রতিবন্ধিতা সহায়ক উপকরণ (হুইল চেয়ার, ক্র্যাচ, শ্রবণযন্ত্র, চশমা ইত্যাদি) ক্রয় ও বিতরণের জন্য আমরা প্রতিটি উপজেলা/থানায় চাহিদার ভিত্তিতে অর্থ বরাদ্দ প্রদান অব্যাহত রেখেছি।

উল্লেখ্য, সুবিধাবঞ্চিত ও বিশেষ শিশুরা যেহেতু সাধারণ শিশুদের চাইতে ভিন্ন প্রকৃতির হয় তাই তাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা ও সচেতন শিক্ষকের প্রয়োজন। যদিও এইসব শিশুদের জন্য পৃথক বিদ্যালয় রয়েছে তারপরও এদের মধ্যে থেকে কয়েকজন শিশু সাধারণ বিদ্যালয়েও চলে আসে। সুতরাং সেই দিকটির কথা বিবেচনায় রেখেই এই ইউনিটে সুবিধাবঞ্চিত ও বিশেষ শিশুদের উপর মোট পাঁচটি পাঠ প্রণয়ন করা হয়েছে।

‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ স্লোগান নিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে জাতীয় সংসদে। নতুন এ বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এতে মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।

এবারের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বেশি। আর সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৮৪ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা বেশি। আগামী অর্থবছরের বাজেটে বড় ব্যয়ের বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের আয়ের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা হতে যাচ্ছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। যেখানে বাজেটে অনুদান ছাড়া ঘাটতির আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। আর অনুদানসহ ঘাটতি থাকবে ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।

২০২২-২৩ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে আয়ের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। যা চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের তুলনায় ৪৪ হাজার ৭৯ কোটি টাকা বেশি। প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারের আয়ের খাতগুলো থেকে কর বাবদ ৩ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা আয় করার পরিকল্পনা করছে সরকার। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে এনবিআরকে ৪০ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দিচ্ছে সরকার। এর মধ্যে এনবিআর বহির্ভূত কর থেকে আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। আর কর ছাড়া আয় ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি। বৈদেশিক অনুদান থেকে আয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২৭১ কোটি টাকা।

জেইউ/ওএফ