২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা অর্জনে ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উৎস থেকে এ বিনিয়োগের অর্থায়ন করা হবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।

বৃহস্পতিবার (৯ জুন) জাতীয় সংসদে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনে এ তথ্য জানান অর্থমন্ত্রী। বর্তমান সরকারের ২২তম এবং বাংলাদেশের ৫১তম বাজেট বেলা ৩টায় জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশনে উপস্থিত আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  

অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে জলবায়ুর ঝুঁকি থেকে টেকসই ও জলবায়ু সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে সরকার ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে, যা মূলত জলবায়ু অর্থায়নের জন্য একটি কৌশলগত বিনিয়োগ কাঠামো। উক্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা অর্জনের জন্য ২০৩০ সাল নাগাদ ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উৎস থেকে এ বিনিয়োগের অর্থায়ন করা হবে।

মুস্তফা কামাল বলেন, ‘জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবিলার অর্থায়নকে সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্তকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে ‘ক্লাইমেট পাবলিক ফাইনান্স ট্রাকিং মেথডলিজ’ প্রণয়নকরত আইবাস সিস্টেমের মাধ্যমে জলবায়ু সংশ্লিষ্ট ২৫টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের বাজেটে জলবায়ু সংক্রান্ত বরাদ্দের পরিমাণ এবং প্রকৃত ব্যয় নিরূপণ করা হচ্ছে। ফলে ওই সব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বরাদ্দ ও ব্যয়ের পরিমাণ জানতে পারছে এবং জলবায়ু বিষয়ক নীতি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণ করতে পারছে।

তিনি বলেন, জলবায়ু সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোর পারফরমেন্স অডিট কিভাবে সম্পাদন করতে হবে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। জলবায়ু অর্থায়ন সংক্রান্ত যেসব পরিভাষা বর্তমানে ব্যবহৃত হয়, সে সকল টেকনিক্যাল শব্দমালা নিয়ে ‘জলবায়ু পরিবর্তন শব্দকোষ’ প্রকাশ করা হয়েছে।

স্বাধীন বাংলাদেশে তাজউদ্দীন আহমদ ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করে ১৯৭২ সালে। সেই থেকে যাত্রা শুরু হয়ে আজ ৫১তম বাজেট পাচ্ছে বাংলাদেশ। নতুন অর্থবছরের বাজেটের আকার দাঁড়াচ্ছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার।

‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ স্লোগান নিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদে পেশ করা হয়েছে। নতুন এ বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এতে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে রাখার কথা বলা হচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বেশি। আর সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৮৪ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা বেশি। নতুন বাজেটে সরকারের আয়ের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা হতে যাচ্ছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। অনুদান ছাড়া ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। আর অনুদানসহ ঘাটতি ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। 

আয়ের লক্ষ্যমাত্রা চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের তুলনায় ৪৪ হাজার ৭৯ কোটি টাকা বেশি। কর বাবদ ৩ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা আয় করার পরিকল্পনা করছে সরকার। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে এনবিআরকে আগের বছরের তুলনায় ৪০ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দিচ্ছে সরকার। এনবিআর বহির্ভূত কর থেকে আয় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। আর কর ছাড়া আয় ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি। বৈদেশিক অনুদান থেকে আয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২৭১ কোটি টাকা।

এসআর/আইএসএইচ