তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর লোকজনকে চাকরি দিলে বিশেষ কর ছাড় দেওয়া হয়েছিল ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি প্রতিবন্ধীদের চাকরি দিলে বিশেষ কর ছাড়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৯ জুন) বিকেলে জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ প্রস্তাব করেন । অর্থমন্ত্রী হিসেবে তার এটি চতুর্থ বাজেট। এবার প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।

জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্বে অধিবেশনে উপস্থিত রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অর্থমন্ত্রী বলেন, যদি কোনো প্রতিষ্ঠান মোট কর্মচারীর ১০ শতাংশ বা ১০০ জনের বেশি তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়, তবে উক্ত কর্মচারীদের পরিশোধিত বেতনের ৭৫ শতাংশ বা প্রদেয় করের ৫ শতাংশ, যেটি কম, তা নিয়োগকারীকে কর রেয়াত হিসেবে অনুমোদনের বিধান চালু রয়েছে। বর্তমান বিধান সংশোধনপূর্বক উভয় ক্ষেত্রে যদি কোনো প্রতিষ্ঠান তার মোট কর্মচারীর ১০ শতাংশ বা ২৫ জনের অধিক প্রতিবন্ধী বা তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয় তবে উক্ত কর্মচারীদের পরিশোধিত বেতনের ৭৫ শতাংশ বা প্রদেয় করের ৫ শতাংশ, যেটি কম, তা নিয়োগকারীকে কর রেয়াত হিসেবে অনুমোদনের প্রয়োজনীয় বিধান সংযোজনের প্রস্তাব করছি।

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমান সরকার দেশের প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে সমাজ ও অর্থনীতির মূলধারায় অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অন্যতম একটি অংশ হচ্ছে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। এ জনগোষ্ঠী অন্যদের চেয়ে আর্থ-সামাজিকভাবে পিছিয়ে আছে এবং তারা সমাজের মূলধারার বাইরে রয়েছে।

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, কর্মক্ষম ও পিছিয়ে পড়া এ জনগোষ্ঠীকে উৎপাদনমুখী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে পারলে সামাজিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের কর্মসংস্থান, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক আত্তীকরণের লক্ষ্যে বর্তমানে চালুকৃত বিশেষ কর প্রণোদনাকে আরও প্রসারিত করার প্রস্তাব করা হলো।

২০২২-২৩ সালের প্রস্তাবিত বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এতে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশে রাখার কথা বলা হচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বেশি। আর সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৮৪ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা বেশি। নতুন বাজেটে সরকারের আয়ের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা হতে যাচ্ছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। অনুদান ছাড়া ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। আর অনুদানসহ ঘাটতি ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। 

আয়ের লক্ষ্যমাত্রা চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের তুলনায় ৪৪ হাজার ৭৯ কোটি টাকা বেশি। কর বাবদ ৩ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা আয় করার পরিকল্পনা করছে সরকার। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে এনবিআরকে আগের বছরের তুলনায় ৪০ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দিচ্ছে সরকার। এনবিআর বহির্ভূত কর থেকে আয় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। আর কর ছাড়া আয় ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদান থেকে আয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২৭১ কোটি টাকা।

এএজে/আরএইচ