বিনিয়োগ আকর্ষণসহ বেসরকারি খাতের উন্নয়ন বাড়াতে সব সেবা সমন্বিত করে একই প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রদানের জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস পোর্টালের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।   

বৃহস্পতিবার (৯ জুন) বিকেলে জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ তথ্য জানান। অর্থমন্ত্রী হিসেবে তার এটি চতুর্থ বাজেট। এবার প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।
 
জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্বে অধিবেশনে উপস্থিত রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অর্থমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ অতিমারির প্রকোপ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক স্থবিরতা সৃষ্টি করলেও সময়োপযোগী ও দূরদর্শী নীতি-কৌশল অনুসরণের ফলে বাংলাদেশ উন্নয়নের ধারা সমুন্নত রাখতে সক্ষম হয়েছে। উন্নয়নের এ ধারাকে টেকসই ও লাগসই করার জন্য প্রয়োজন সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত রাখা, আর এর সুফল সকলের নিকট অর্থপূর্ণভাবে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশাসন প্রতিষ্ঠা।

মন্ত্রী বলেন, একটি দেশের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হলো বেসরকারি খাত। বেসরকারি খাতকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। বৃহৎ শিল্পসমূহ যেন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চাহিদা মেটানোর উপযুক্ত প্রযুক্তি গ্রহণ এবং অধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে সে লক্ষ্যে সরকারের প্রণোদনা এবং উপদেশমূলক পরিষেবা কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে।
 
পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পসমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সরকারের নানারূপ প্রণোদনা ও ঋণ সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি। 

মন্ত্রী বলেন, বিনিয়োগ সংক্রান্ত সব সেবা সমন্বিত করে একই প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রদানের জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস পোর্টালের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার বিনিয়োগ সংক্রান্ত সেবাসমূহ উক্ত পোর্টালে পর্যায়ক্রমে যুক্ত করা হচ্ছে। ওয়ান স্টপ সার্ভিস পোর্টালের মাধ্যমে ৩৯টি সংস্থার ১৫০টি বিনিয়োগ সংক্রান্ত সেবা অনলাইনে প্রদানের লক্ষ্য নিয়ে বর্তমানে ১৯টি প্রতিষ্ঠানের ৫৮টি সেবা দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, অতি শিগগিরই অবশিষ্ট সেবাসমূহ এ পোর্টালে সংযোজন করা হবে। কাস্টমস বন্ডেড অটোমেশনের কাজ চলমান রয়েছে, যা খুব শীঘ্রই শেষ হবে। এছাড়া, বন্ড লাইসেন্স নবায়ন সহজীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এতে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে রাখার কথা বলা হচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বেশি। আর সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৮৪ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা বেশি। নতুন বাজেটে সরকারের আয়ের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা হতে যাচ্ছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। অনুদান ছাড়া ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। আর অনুদানসহ ঘাটতি ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।

আয়ের লক্ষ্যমাত্রা চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের তুলনায় ৪৪ হাজার ৭৯ কোটি টাকা বেশি। কর বাবদ ৩ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা আয় করার পরিকল্পনা করছে সরকার। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে এনবিআরকে আগের বছরের তুলনায় ৪০ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দিচ্ছে সরকার। এনবিআর বহির্ভূত কর থেকে আয় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। আর কর ছাড়া আয় ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদান থেকে আয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২৭১ কোটি টাকা।

জেইউ/আরএইচ