শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মজুরি, কর্মে অংশগ্রহণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, নেতৃত্ব ও শীর্ষ ব্যবস্থাপনাসহ নানা ক্ষেত্রে কোনো না কোনোভাবে নারী-পুরুষ বৈষম্য বিদ্যমান। বৈষম্য নিরসনে সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারও রয়েছে। এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সরকারি নীতি প্রণয়ন ও সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিতে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার লক্ষে জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদন প্রবর্তন করেছে সরকার।

বাজেটের বরাদ্দ এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বিগত বছরসমূহের নারী উন্নয়নে গৃহীত কার্যক্রম, জেন্ডার বৈষম্য নিরসনে বিভিন্ন প্রকল্পের প্রভাব এবং নারী কল্যাণের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রধান কর্মকৃতি নির্দেশকসহ নানাবিধ সফলতার বিবরণ তুলে ধরে ২০০৯-২০১০ অর্থবছর থেকে এ জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। শুরুতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সমাজকল্যাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় জেন্ডার বাজেট প্রকাশ করে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪০টি, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪৩টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগকে জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

নারী উন্নয়ন সংক্রান্ত কার্যক্রম ও অগ্রাধিকার রয়েছে এমন ৪৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে আওতাভুক্ত করে ‘জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদন ২০২২-২৩’ প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে এবারের জেন্ডার বাজেটে নারী উন্নয়নের জন্য অর্থপ্রবাহ নিরূপণে শুধুমাত্র সরকারি অর্থায়নকে বিবেচনায় আনা হয়েছে। তবে মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন ও পরিচালন উভয় বাজেটকে নারী উন্নয়ন বা জেন্ডার সংবেদনশীলতা চিহ্নিত করা হয়েছে।

এবারের ২০২২-২৩ অর্থবছরে জেন্ডার বাজেট হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে ২ লাখ ২৯ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ৩৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ। ২০০৯-১০ অর্থবছরে জেন্ডার সংশ্লিষ্ট বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ২৭ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ২৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ ছিল। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে প্রকাশিত জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদন-২০২২-২৩ সূত্রে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

বৃহস্পতিবার (৯ জুন) জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীরা পুরুষের তুলনায় পিছিয়ে থাকার কারণে এ জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদনে নারী উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর কর্মসংস্থান এসব বিষয়গুলো প্রাধান্য পেয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে জেন্ডার সম্পৃক্ত কার্যক্রমে যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে তা থেকে নারী উন্নয়ন সংক্রান্ত বরাদ্দকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যা বাজেট পরবর্তী বিশ্লেষণ।

সামগ্রিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে নারীর উন্নয়নের জন্য কেবল বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা, নারীবান্ধব কর ও রাজস্ব নীতিসহ নানাবিধ নীতিমালা প্রণয়ন করা এবং সে অনুযায়ী উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়াই শেষ কথা নয়, বরং বাজেট বরাদ্দ কতটা দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহৃত হয়েছে, অর্থের মূল্য অর্জন করে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো কতটা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে এবং এগুলোর প্রভাব জেন্ডার বৈষম্য দূরীকরণের মূল উদ্দেশ্য অর্জনে কতটুকু সহায়ক হচ্ছে তা পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

তবে বাজেটে জেন্ডারভিত্তিক বিশ্লেষণ পরিপূর্ণভাবে অন্তর্ভুক্ত করা একটি সুদীর্ঘ প্রক্রিয়া- এজন্য নীতি, পরিকল্পনা ও কর্মসূচি প্রণয়নের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গের দৃষ্টিভঙ্গীরও পরিবর্তন প্রয়োজন বলে মত দেন অর্থমন্ত্রী।

তিনি দাবি বলে বলেন, জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদন নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে। জেন্ডার বৈষম্য নিরসনে সরকারের বহুমুখী উদ্যোগ সম্পর্কে সকল শ্রেণির অংশীজন এ প্রতিবেদন থেকে সম্যক ধারণা লাভ করতে পারে। কোভিডজনিত মহামারি পরিস্থিতিতে বিগত দুই বছর এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। এ প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে আমরা পুনরায় জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদন প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছি। এই প্রতিবেদন নারী উন্নয়নে সরকার কর্তৃক গৃহীত ও বাস্তবায়িত সব পদক্ষেপ যথার্থভাবে তুলে ধরবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

 

জেইউ/আরএচ