বাস্তবায়নে নানামুখী চ্যালেঞ্জ থাকলেও ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে বিনিয়োগবান্ধব ও যুগোপযোগী বলে আখ্যায়িত করেছে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি)।

শনিবার (১১ জুন) আইসিএবি কাউন্সিল হলে আয়োজিত ‌‘প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের ওপর চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টদের ভাবনা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে তাদের অবস্থান তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অর্থমন্ত্রী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার একটি সময়োপযোগী ও ব্যাপক আকারের বাজেট সংসদে পেশ করেছেন। প্রস্তাবিত বাজেট দেশের জিডিপির ১৫.২ শতাংশ। বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২.৩২ শতাংশ। চ্যালেঞ্জ থাকলেও এই যুগোপযোগী বাজেট প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাস্তবায়ন সম্ভব বলে আমরা মনে করি।

অতিমারি-পরবর্তী পরিস্থিতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং অন্যান্য বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা থাকা সত্ত্বেও সরকার ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ নিয়েছে, যা আমাদের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের এগিয়ে যাওয়ার জন্য অত্যন্ত উৎসাহজনক পদক্ষেপ। অবকাঠামো খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ করা বাজেট সরকারের নেওয়া একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ।

এতে আরও বলা হয়, বিগত বছরগুলোর মতো এ বছরও আইসিএবি জাতীয় বাজস্ব বোর্ডকে ২০২২-২৩ বাজেট সংক্রান্ত রাজস্ব আইনসহ অন্যান্য আইন ও বিধির ওপর প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এসব প্রস্তাবনাগুলোর অনেকাংশেই গৃহীত হয়েছে, সেজন্য আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।

অনুষ্ঠানে আইসিএবি সভাপতি শাহাদাত হোসাইন বলেন, পণ্য ও সেবা রপ্তানিকারী অন্যান্য সাধারণ শিল্পের জন্য ১২ শতাংশ এবং গ্রিন শিল্পের জন্য ১০ শতাংশ করের হার প্রবর্তন পণ্য ও পরিষেবার রপ্তানির বৈচিত্র্যকে উৎসাহিত করবে। তাছাড়া একত্রীকরণ এবং গবেষণা ও উন্নয়নের সংজ্ঞা পরিবর্তন করা, প্রাক-প্রবর্তন ব্যয়ের পরিমার্জন এবং স্টার্ট-আপ ব্যবসার জন্য পৃথক বিধান, যা নতুন প্রজন্মের ব্যবসায়িক ও সৃজনশীল উদ্যোগে অনুপ্রেরণামূলক ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবে।

তিনি বলেন, ব্যবসায়িক পরিষেবার ওপর ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট, মূসক রেয়াত গ্রহণের সময়সীমা ২ করমেয়াদ থেকে ৪ করমেয়াদ পর্যন্ত বৃদ্ধি করার প্রস্তাব, জরিমানা ১০০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ ১০০ শতাংশ কমানো, বন্ডেড ওয়্যারহাউসে অপারেশন ইলেকট্রনিকভাবে সম্পন্ন করা- এ বিষয়গুলো যুগোপযোগী এবং ব্যবসাবান্ধব।

আইসিএবির সভাপতি আরো বলেন, চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টরা কর পরিকল্পনা করার ক্ষেত্রে, কর পরামর্শক হিসেবে, কর আইনের সঠিক প্রতিপালন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে করদাতা ও সরকারকে সহায়তা করে থাকে। সর্বোপরি রাজস্ব আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। দেশে এফডিআই আনা এবং উদ্যোক্তাদেরকে নতুন নতুন ব্যবসায় উৎসাহিত ও পরামর্শ দেওয়া, ব্যবসা করার সহজতা নিশ্চিত করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনীতিতে অবদান রাখতে বিশেষ মতামত দেওয়ার মাধ্যমে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহায়তা করে আসছেন।

আইসিএবির সাবেক সভাপতি মো. হুমায়ুন কবির বলেন, কর্পোরেট কর ২.৫ শতাংশ কমানোর কারণে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হবেন।

তিনি বলেন, আমাদের পাশের দেশ ভারতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়। দেশের টাকা যে বিদেশে চলে যাচ্ছে, আমরা চাই সরকারের পলিসি অনুযায়ী তা যেন দেশে ফিরে আসে। সরকার যাতে এক্ষেত্রে লাভবান হতে পারে।

প্রশ্নোত্তর পর্বে আইসিএবির কাউন্সিল মেম্বার সাব্বির আহমেদ বলেন, বাজেটে কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে, এটা নতুন কিছু নয়। স্বাধীনতার পর থেকে এই সুযোগ দিয়ে আসা হচ্ছে। এই সুবিধা বিশ্বের অন্যান্য দেশেও দেওয়া হয়। এটাকে লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে আনার চেষ্টা করছে সরকার। যে উদ্দেশ্যে সরকার এটা করছে, আমি তার সফলতা কামনা করি।

তিনি বলেন, বিশ্বে মুদ্রাস্ফীতি ব্যাপক হারে বাড়ছে। এটা আমাদের বাজেট সফল করার ক্ষেত্রে অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জ। সরকার একটা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এটা যাতে বাস্তবায়ন হয়। এতে আমাদের দেশের মুদ্রাস্ফীতি একটা লেভেলে চলে আসবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন আইসিএবির সহসভাপতি এন কে এ মবিন, কাউন্সিল মেম্বার আব্দুল কাদের জোয়াদ্দার, এম বি এম লুৎফুল হাদী, সিইও শুভাশীষ বোস প্রমুখ।

এএজে/জেডএস