বাজেট পর্যালোচনায় সার্বিক বিষয়ে উন্নয়নের জন্য ছয় দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম)।

সোমবার (১৩ জুন) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত সানেম বাজেট পর্যালোচনায় এসব বিষয় উঠে এসেছে।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, আমাদের মূল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার দিকে তাকিয়ে আমাদের ছয় দিকে আলাদা গুরুত্ব দিলে আমরা আরও এগিয়ে যেতে পারব। গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়গুলো হচ্ছে- সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখা, কর্মসংস্থান তৈরি, দারিদ্রতা ও বৈষম্য কমিয়ে আনা এবং সবশেষ মানবসম্পদ উন্নয়ন।

পর্যালোচনায় অংশ নিয়ে সানেমের গবেষণা পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, রাজস্ব আরোহণের ক্ষেত্রে কিছু দুর্বলতা আছে, সেই সঙ্গে টার্গেট পরিপূর্ণ করার একটা চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। সাধারণ মানুষের দারিদ্র বিবেচনা বা অবস্থার উন্নয়নে সহযোগিতা করে সেগুলোর বাস্তবায়নের দিকটার গতি কিছুটা কম রয়েছে। বাজেট কেন্দ্রিক সাধারণ মানুষের যে সুবিধা পাবার কথা সেটা অনেক ক্ষেত্রেই পাচ্ছে না। সঠিক কর আরোহরণের বৈষম্য দূর করার পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়ন, সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে হবে। তবে সে জায়গায় আমাদের এক ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। করের জালটা আমরা বাড়াতে পারিনি। প্রগ্রেসিভ ট্যাক্স স্ট্রাকচারে আমরা পিছিয়ে আছি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া সরকারি খরচগুলো সাবধানতার সঙ্গে অবলম্বন করতে হবে। যাতে করে আমরা ভালো অবস্থানের মধ্যে থাকতে পারি। অন্যদিকে খোলাবাজারে আমাদের ডলারের দাম নির্ধারণ করা উচিত। ধীরে ধীরে বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে নির্ধারণ করতে সুযোগ দেওয়া উচিত। যেটা দিলে পার্থক্যটা আস্তে আস্তে কমে যাবে। ফলে প্রবাসীরা বৈধ পথে ডলার পাঠাবে, সংখ্যা বাড়বে। সেই ক্ষেত্রে প্রণোদনারও প্রয়োজন হবে না। রপ্তানির ক্ষেত্রে ওভার ইনভয়েস হচ্ছে কি না সেটা দেখাও জরুরি।

সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, নতুন করে বিশাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে অসহায়ত্বের সৃষ্টি হয়েছে, দরিদ্র হয়েছে- সেটার কোনো প্রতিফলন নেই বাজেটে। আমরা যদি সঠিকভাবে সমস্যা চিহ্নিত করতে না পারি তাহলে আমরা সমাধানের পথেও হাঁটতে পারব না। এ বিষয়ে বাজেটে পরিষ্কার করে বলা হয়নি। অন্যদিকে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য সরকারের যে প্রতিষ্ঠান গুলো আছে সেগুলোর ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করছে কি না সে দিকটাতে নজর দেওয়া জরুরি। 

তিনি আরও বলেন, আমদানি নির্ভর নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো ওপর নানা ধরনের শুল্ক আছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে যখন দাম বেড়ে গেছে তখন সেগুলো আমদানি শুল্ক, কর ভ্যাট, ট্যাক্সে ছাড় দিলে দেশের বাজারে এগুলোর দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকতে পারত। তাই ছাড় দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ থাকা উচিত ছিল বাজেটে। মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য যে উদ্যোগগুলো আছে সেগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া উচিত। সরকারের প্রতিযোগিতা কমিশন, অধিদপ্তর আছে তাদের মাধ্যমে বছর জুড়ে কিভাবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় তার উদ্যোগ গ্রহণ এখন জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সেলিম রায়হান বলেন, কোভিড কেন্দ্রিক সরকারি কোন সার্ভে হয়নি। মানুষের কি ধরণের সমস্যা হয়েছে, কেমন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে, এগুলো সমস্যার সমাধান কিভাবে করা যাবে তাও চিহ্নিত করা হয়নি। তবে বেসরকারি পর্যায়ে থেকে এসব নিয়ে নানা জরিপ হয়েছে, যারা এসব জরিপ করেছেন তাদের সবাইকে একসঙ্গে বসিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে একটি সেমিনার আয়োজন করার দাবি জানাচ্ছি। আর এর মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যার কথা উঠে আসবে এবং সমাধানের পথ গুলো চিহ্নিত হবে। পরবর্তী উদ্যোগগুলো নিতে সহজ হবে। বর্তমানে দারিদ্র, শ্রমশক্তি, বৈষম্য সব কিছু নিয়ে আমাদের সবার সঙ্গে আলোচনা করা উচিত বলে আমি মনে করি।

ব্র‍্যাক সেন্টারে আয়োজিত বাজেট পর্যালোচনায় সানেমের রিসার্চ টিমের সদস্য হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন ফারহিন ইসলাম, তুহিন আহমেদ, ইসরাত শারমিন, নাদীম উদ্দিন আফিয়া মোবাসশাহির তিশা, সামানত রহমান, কানিজা মুহাসিনা প্রমুখ।

এএসএস/আইএসএইচ