পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিমা খাতের কোম্পানি এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির অভিযোগ উঠেছে। মাত্র ৩৩ সেকেন্ডে কারসাজির মাধ্যমে ৩২ টাকার শেয়ার ৩ টাকায় লেনদেন হয়েছে। এসব শেয়ার বিক্রি হয়েছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ সিকিউরিটিজের পোর্টফোলিং থেকে। এ তাদের ক্ষতি হয়েছে ক্ষতি হয়েছে ২ কোটি ৪৯ লাখ ৫৩ হাজার টাকা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য মতে, বৃহস্পতিবার শেয়ারটি সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৩২ টাকা ১০ পয়সা। কিন্তু তার মধ্যে ১২ লাখ ৯২ হাজার ৯৪০ টাকার শেয়ার বিক্রি হয়েছে মাত্র ৩ টাকা দরে। যার মূল্য ১ কোটি ৩৮ লাখ ৩৪ হাজার ৪৯৮ টাকা। এই শেয়ারটি কিনেছেন একজন নারী।

এ কারসাজির ঘটনা নজরে আসার পর ডিএসই এ লেনদেন বাতিল করেছে। পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে ডিএসই।

অপরদিকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বিষয়টি অনিচ্ছাকৃত ভুল নাকি কারসাজি তা খতিয়ে দেখছে বলে জানা গেছে।

যেভাবে কারসাজি হয়
বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের মোট ২২ লাখ ৫৭ হাজার ৯৯৪টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এদিন লেনদেনের শুরুতে শেয়ারটির দাম ছিল ২৯ টাকা ৯০ পয়সা। আর শেষ লেনদেন হয়েছে ৩২ টাকা ১০ পয়সা দরে। সেই হিসেবে ২৯ টাকা থেকে ৩২ টাকা দরের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ার কেনা-বেচা হওয়ার কথা।

কিন্তু ২৯ টাকা কিংবা ৩২ টাকা নয়, মাত্র ৩ টাকা দরে ১২ লাখ ৯২ হাজার ৯৪০ শেয়ার ফারইস্ট ইসলামী লাইফের নিজস্ব পোর্টফলিও থেকে বিক্রির অর্ডার দেওয়া হয়। এই শেয়ার কিনেছেন লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের এক নারী গ্রাহক যার মূল্য ১ কোটি ৩৮ লাখ ৩৪ হাজার ৪৯৮ টাকা। অর্থাৎ ৩০ টাকা দরে ১২ লাখ ৯২ হাজার ৯৪০টি শেয়ার বিক্রি হলে ফারইস্ট লাইফের শেয়ার বিক্রি হতো ৩ কোটি ৮৭ লাখ ৮৮ হাজার ২০০ টাকা। তাতে কোম্পানির লস হয়েছে অন্তত ২ কোটি ৪৯ লাখ ৫৩ হাজার ৭০২ টাকা। ঘটনাটি ঘটে লেনদেনের শুরুর ৩৩ সেকেন্ডে অর্থাৎ ১০টা থেকে ১০টা ৩৩ সেকেন্ডে এসব শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

এদিকে গতকাল বুধবার (১৫ জুন) এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের পর্ষদ সভায় ২০২১ সালের নিরিক্ষীত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এর ফলে আজ বৃহস্পতিবার লেনদেনের শুরু থেকেই কোম্পানির শেয়ার উঠানামার ক্ষেত্রে কোনো সার্কিট ব্রেকার ছিল না। ফলে বিষয়টি বিনিয়োগকারী কিংবা ডিএসই কর্তৃপক্ষের নজর এগিয়ে যায়। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের নজরে আসে। এরপর বিভিন্ন পক্ষ থেকে ডিএসইকে অবহিত করলে সাভেইল্যান্সের মাধ্যমে ডিএসই কর্তৃপক্ষ সত্যতা পায়।

এরপর ডিএসই কর্তৃপক্ষ অস্বাভাবিক লেনদেন অর্থাৎ শেয়ার কেন-বেচার অর্ডারটি বাতিল করেছে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ফারইস্ট লাইফ সিকিউরিটিজের সিইও নাজমুন মনির বলেন, এমন ঘটনা কীভাবে ঘটলো, আমি বলতে পারবো না। তবে আমরা গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আমরা শেয়ার কেনা-বেচার অর্ডার দিয়ে থাকি ক্লায়েন্টের পছন্দ মত। ক্লায়েন্ট যখন বলেন, তখন আমরা অর্ডার বসাই। আজ এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার যিনি কিনেছেন তিনি আমাদের একজন ক্লায়েন্ট, তিনি অনলাইনে এ লেনদেন সম্পন্ন করেছেন।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত দুই বছর ধরে বিমা কোম্পানির শেয়ারে ব্যাপক কারসাজি হয়েছে। আজকেও তাই হয়েছে। তা না হলে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কোড থেকে এত কম দামে শেয়ার বিক্রির অর্ডার দেওয়া হয়েছে কেন?।

তার বলেন, একটি কোম্পানির পোর্টফোলিও থেকে ব্যক্তির পোর্টফোলিওতে নামমাত্র দামে এতো শেয়ার গেল কেন এবং কী উদ্দেশ্যে? আগে এই ধরনের কারসাজি আর কখনও দেখা যায়নি। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি বিশেষ সুবিধার জন্য উভয় পক্ষ পরিকল্পিতভাবে এই কারসাজি সংগঠিত করেছে।

বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) সাইফুর রহমান মজুমদার। তিনি বলেন, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিক অবস্থায় ৩ টাকা দরে লেনদেন (ক্রয়-বিক্রয়াদেশ) হওয়ার সব শেয়ারে অর্ডার বাতিল করা হয়েছে। এরপর বিষয়টিকে নিয়ে তদন্ত করা হবে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে বিএসইসির কাছে শাস্তির জন্য সুপারিশ করবো।

৩০ টাকার শেয়ার তিন টাকা বিক্রির ঘটনায় আমলে নিয়েছে বিএসইসি। ইতোমধ্যে বিএসইসির সার্ভেইল্যান্স বিভাগ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি অনিচ্ছাকৃত ভুল নাকি কারসাজি, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারসাজি হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিষয়টি নিয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, কিছু চক্রই রয়েছে যারা পুঁজিবাজারে কাজ করেন। নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিৎ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

এমআই/এসএম