জ্বালানি অধিকার হলো সঠিক দামে, সঠিক মানে ও মাপে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা। কিন্তু আমরা কি সঠিক দামে বিদ্যুৎ পাচ্ছি। যে দাম নির্ধারণ করা হয় সেটা কি সঠিক? নিঃসন্দেহে সঠিক নয়।

রোববার (২৬ জুন) গুলশানের একটি হোটেলে জাতীয় বাজেটে এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার সেক্টর শীর্ষক আয়োজিত সেমিনারে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম এমন প্রশ্ন উত্থাপন করেন।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, পেট্রোলিয়াম, এলএনজি ও কয়লা আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত চাপের মুখে পড়েছে। ভর্তুকি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির পরেও ব্যয় সমন্বয় করা কঠিন। বাড়তি উদ্যোগ না নিয়ে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ভালো বিকল্প হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও তা উপেক্ষা করা হয়েছে।

প্রফেসর শামসুল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে গেছে। আমাদের অভ্যন্তরীণ জ্বালানি চাহিদাও বেড়েছে। সুতরাং আমাদের জ্বালানির দাম বাড়বে, জ্বালানির দাম বাড়লে বিদ্যুতের দাম বাড়বে। এটাই বাস্তবতা। কিন্তু এই সেক্টরে দীর্ঘদিন যাবত অন্যায় ব্যয় ও লুণ্ঠনমূলক ব্যয় চলে আসছে। যে ব্যয়কে বিশেষ আইনের দ্বারা সুরক্ষিত করা হয়েছে। আজকে সময় এসেছে এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলার। সরকার বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে কম দামে দিচ্ছে। তাহলে সেই ঘাটতি কোথা থেকে আসবে। যেখানে ২০ থেকে ২২ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি তৈরি হয়েছে। 

তিনি বলেন, জ্বালানি অধিকার হলো সঠিক দামে, সঠিক মানে ও মাপে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হবে। আমরা কি সঠিক দামে বিদ্যুৎ পাচ্ছি। যে দাম নির্ধারণ করা হয় সেটা কি সঠিক? নিঃসন্দেহে নয়। আমরা জ্বালানি খাতে ১০ দফা কিংবা ২১ দফা সংস্কারের কথা বলেছি। সেখানে সবাই বলেছি, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে তাদের বোর্ড থেকে আমলাদের অপসারণ করতে হবে। প্রশাসন অচল হয়ে যাচ্ছে। কোনো অন্যায়ের প্রতিকার হচ্ছে না। 

শামসুল আলম বলেন, সরকার চাচ্ছে বিদ্যুৎখাত বাণিজ্যিক খাতের মাধ্যমে চালাতে। তাহলে আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি করা প্রয়োজন। হোক সেটা দেশি কিংবা বিদেশি। তাহলে ন্যায্য দামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সরকারকে নির্ধারিত দামে বিদ্যুৎ ক্রয় করতে পারবে। কোম্পানির কাছে সরকার কেন জিম্মি হবে? সরকারের উদ্যোগ কেন হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে। সরকার যদি এখন উদ্যোগ না নেয় তাহলে বিদ্যুৎ খাত নিয়ে সরকারের স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকে যাবে। এক সময় জনগণের মধ্যে চরম অসন্তোষ তৈরি হবে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইমরান করিম বলেন, সরবরাহ সিস্টেম ঘাটতি রয়েছে, সে কারণে লোডশেডিং হচ্ছে। বিদ্যুতে আমাদের সত্যিকারের ক্যাপাসিটি ১৬ হাজার মেগওয়াট। ১৬ হাজার মেগওয়াট কিছু না। আমাদের অন্তত ২০ শতাংশ বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন। 

আরএম/এসএম