ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে রাশিয়ার সোনা আমদানি নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও কানাডা। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে রাশিয়ার উত্তোলিত নতুন বা পরিশোধিত কোনো ধরনের সোনা আমদানি করবে না এ চার দেশ। এর ফলে বিশ্বব্যাপী সোনার বাজারে এক ধরনের প্রভাব পড়তে পারে? এর প্রভাব দেশের বাজারে কেমন হবে, সোনার দাম বাড়বে নাকি কমবে? এ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে দেশের জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে।

রোববার (২৬ জুন) জার্মানিতে বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি৭ এর নেতাদের বৈঠকের আগে ব্রিটেনের সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়, রাশিয়ার উত্তোলিত নতুন অথবা পরিশোধিত সোনার ওপর শিগগিরই চার দেশের আমদানি নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।

রাশিয়ার সোনায় চার দেশের নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশের বাজারে প্রভাবের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) সাধারণ সম্পাদক এবং ডায়মন্ড ওয়ার্লড-এর কর্ণধার দিলীপ কুমার আগারওয়াল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা দেশি-বিদেশি পত্রপত্রিকার মাধ্যমে খবরটি জেনেছি। কোনো দেশ থেকে স্বর্ণ আমদানির নিষেধাজ্ঞা এটিই প্রথম ঘটনা। এর আগে বিশ্ব এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি। তাই এর প্রভাব সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। এর ফলে প্রাথমিকভাবে রাশিয়ার ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়বেন। সার্বিক বিষয় জানতে কিছুটা সময় লাগবে। আমরা এক সপ্তাহ বাজার দেখব, এরপরই বলতে পারব কী পরিস্থিতি হবে। সোনার দাম বাড়তে পারে, তবে নিশ্চিত নয়।

জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের এ নেতা বলেন, আন্তর্জাতিক সোনার বাজারে গত এক সপ্তাহ বা এক মাসের তথ্য দেখে আমরা বলতে পারি, এখনই দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই।

বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের বাজারে স্বর্ণের ব্যবসা কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে বাজুসের সাধারণ সম্পাদক জানান, ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। বছরের মাঝামাঝিতে সব সময় ব্যবসা কম থাকে, কিন্তু এবার একটু বেশি খারাপ যাচ্ছে। 

কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশের কয়েকটি এলাকা বন্যায় প্লাবিত, দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বমুখী, মানুষের আর্থিক অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। এছাড়া জুন ক্লোজিং আছে। সবমিলিয়ে বাজার খুব একটা ভালো নয়।

তিনি বলেন, স্বর্ণ কেনাকাটা অনেকটা ঐচ্ছিক বিষয়। মানুষের সব চাহিদা পূরণের পর কেউ হয়ত স্বর্ণ কেনার কথা ভাবেন বা কারো জরুরি হলে তখন কেনেন। যখন মানুষের আর্থিক অবস্থা ভালো থাকে না তখন ব্যবসা মন্দা অবস্থায় পড়ে।

দেশের বাজারে গত ২৬ মে সবশেষ সোনার দাম পুনর্নির্ধারণ করা হয়। ওই দামেই এখন পর্যন্ত সোনা কেনাবেচা হচ্ছে। এখন ভালো মানের ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) সোনা কিনতে খরচ পড়ছে ৭৯ হাজার ৫৪৮ টাকা। ২১ ক্যারেটের সোনার দাম ৭৫ হাজার ৯৩৩ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনা ৬৫ হাজার ৮৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরির দাম ৫৪ হাজার ২৩৮ টাকা।

আন্তর্জাতিক বাজারে ২৭ জুন প্রতি আউন্স সোনা আগের দিনের চেয়ে ৭ দশমিক ৩৮ ডলার বেড়ে এক হাজার ৮৩৮ ডলারে কেনাবেচা হচ্ছে। তবে গত এক মাসের তুলনা করলে সোনার দাম প্রায় দেড় শতাংশ কম রয়েছে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, গত বছর রাশিয়া ১৫ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সোনা রপ্তানি করেছিল। সম্প্রতি দেশটির ধনকুবেররা পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার আর্থিক প্রভাব কমাতে বুলিয়ন (সোনা-রুপার বাট) কিনতে শুরু করেছেন।

এসআই/জেডএস