বিভিন্ন উপায়ে পাচার হওয়া অর্থ কোনো রকম প্রশ্ন ছাড়াই বৈধ করার সুযোগ বহাল থাকলেও স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বৈধতায় অর্থদণ্ডের বিধান রেখে অর্থবিল-২০২২ পাস হয়েছে।

জাতীয় সংসদে পাস হওয়া অর্থ বিলে এ বিধান যোগ করা হয়েছে। বুধবার (২৯ জুন) জাতীয় সংসদে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সংশোধনী আনেন। পরে তা কণ্ঠ ভোটে পাস হয়।

২০২২-২০২৩ সালের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় বিদেশে রক্ষিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে রিটার্নে প্রদর্শন ও পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার বিধান রাখা হয়। তবে সংসদ সদস্য, অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রিটার্নে প্রদর্শনের বিধান বাতিল করা হয়। প্রস্তাবিত বাজেটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে স্থাবর সম্পত্তি (জমি, ফ্ল্যাট, আবাসিক ভবন, শিল্প-কারখানা বা জমিতে অবস্থানরত সম্পদ), ১০ শতাংশ কর দিয়ে অস্থাবর সম্পত্তি (অর্থ, অলংকার, ঘড়ি বা অন্য মূল্যবান ধাতব পদার্থ) আয়কর রিটার্নের প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়া হয়। তবে রিটার্নে বিদেশে রক্ষিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ না দেখালে জরিমানার বিধান যুক্ত করা হয়েছে অর্থবিলে। 

অর্থাৎ কোন ব্যক্তির বিদেশে সম্পদ থাকলে সেটি রিটার্নে না দেখালে সম্পদের বর্তমান বাজার মূল্যের সমান অর্থদণ্ড আরোপের বিধান করা হয়েছে। অবশ্য বিদেশে পাচার করা অর্থ ৭ শতাংশ কর দিয়ে ফিরিয়ে আনার বিশেষ সুবিধা বহাল রাখা হয়েছে। এ পদ্ধতিতে দেশে টাকা আনা হলে সরকারি কোনো সংস্থা প্রশ্ন করবে না।

এর আগে গত ৯ জুন দেশ থেকে বিভিন্ন উপায়ে পাচার হওয়া অর্থ প্রস্তাবিত বাজেটে বৈধ করার সুযোগ দিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তার বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন। সেখানে কর দিয়ে এসব অর্থ বৈধ হয়ে গেলে এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবে না আয়কর কর্তৃপক্ষসহ যেকোনো কর্তৃপক্ষ। 
 
ওই দিন বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, বিশ্বব্যাপী করোনার প্রাদুর্ভাব ও চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দার পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায় আগামী অর্থবছরে আমাদের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হতে পারে। এমতাবস্থায়, আর্থিক নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অধিক বিচক্ষণতা ও দূরদর্শী পন্থা অবলম্বন করতে হবে। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সরকারি ব্যয় নির্বাহের জন্য এক দিকে আমাদের অধিক পরিমাণে রাজস্ব জোগান দিতে হবে, অন্যদিকে বেসরকারি খাতেও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আনতে হবে। এ অবস্থায় বিদেশে অর্জিত অর্থ ও সম্পদ অর্থনীতির মূল স্রোতে আনার মাধ্যমে বিনিয়োগ ও আর্থিক প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে তিনি আয়কর অধ্যাদেশে নতুন বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব দেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত বিধান অনুযায়ী বিদেশে অবস্থিত যেকোনো সম্পদের ওপর কর পরিশোধ করা হলে আয়কর কর্তৃপক্ষসহ যেকোনো কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করবে না। বিদেশে অর্জিত স্থাবর সম্পত্তি বাংলাদেশে আনা না হলে এর ওপর ১৫ শতাংশ, বিদেশে থাকা অস্থাবর সম্পত্তি বাংলাদেশে আনা না হলে ১০ শতাংশ ও বাংলাদেশে পাঠানো (রেমিট্যান্স) নগদ অর্থের ওপর ৭ শতাংশ হারে করারোপের প্রস্তাব করেন তিনি। এ সুবিধা ২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বলবত থাকবে বলে উল্লেখ করেছিলেন বক্তৃতায়।

আরএম/এসকেডি