কোরবানির ঈদ সামনে রেখে বেড়েছে ফ্রিজ বিক্রি। বিশেষ করে ফ্রিজার বা ডিপ ফ্রিজের চাহিদা বেড়েছে। মূলত কোরবানির পশুর মাংস সংরক্ষণের উদ্দেশ্য নিয়েই ফ্রিজ কিনছেন মানুষ।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শোরুম ও দোকান ঘুরে দেখা গেছে কোরবানি ঈদের প্রভাবে ফ্রিজের বিক্রি বেড়েছে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। কোম্পানিগুলোও সব শ্রেণির ক্রেতাকে লক্ষ্য রেখে ডিসকাউন্ট ও ক্যাশ ব্যাক অফারসহ বিভিন্ন অফার দিচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গরম ও কোরবানির ঈদে ফ্রিজের পাশাপাশি এসির চাহিদা বাড়ে। আমাদেরও বিশেষ নজর থাকে এই সময়ে। কারণ সারাবছরের মধ্যে দুই ঈদেই ফ্রিজ ও এসির চাহিদা বেড়ে যায়। এই সময়ে মানুষের হাতে বেতন ও বোনাসসহ বাড়তি কিছু টাকা আসে। ফলে তারা নিজের ঘরের জন্য একটু অতিরিক্ত খরচ করতে চায়। সে কারণে এখন থেকেই কোরবানির ঈদকেন্দ্রিক প্রস্তুতি রয়েছে ব্যবসায়ীরা।

ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক্যাল পণ্যের বাজারে গত কয়েক বছর ধরেই নেতৃত্ব দিয়ে আসছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ড ওয়ালটন। গরম ও ঈদ উপলক্ষে বিক্রি বেড়েছে ওয়ালটনের ফ্রিজ ও এসির। তুলনামূলক কম দাম হওয়ায় নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত মানুষের পছন্দের তালিকায় এগিয়ে রয়েছে ওয়ালটন। ক্রেতা ধরতে ফ্রিজ, এসি কিংবা টেলিভিশনে কোম্পানিটির চলছে বাড়তি অফার।  

কোরবানির ঈদ উপলক্ষে সারা দেশে চলছে ওয়ালটনের ডিজিটাল ক্যাম্পেইন সিজন-১৫। এ ক্যাম্পেইনের আওতায় দেশের যেকোনো ওয়ালটন প্লাজা, পরিবেশক, শোরুম কিংবা অনলাইনের ই-প্লাজা থেকে ফ্রিজ, টিভি, এসি, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ব্লেন্ডার, গ্যাস স্টোভ, রাইস কুকার ও ফ্যান কিনে ক্রেতারা পেতে পারেন ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ক্যাশব্যাক। এর আগে ক্যাশব্যাক পুরস্কার ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ছিল, কোরবানি উপলক্ষে অফার বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ওয়ালটন গ্রুপের চিফ মার্কেটিং অফিসার ফিরোজ আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঈদ সামনে রেখে আমাদের বেশকিছু নতুন ডিজাইন উন্মোচন করা হয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইনভার্টার প্রযুক্তির ডিপ ফ্রিজার। কারণ কোরবানিতে ডিপ ফ্রিজের চাহিদা বেড়ে যায়। সব শ্রেণির ক্রেতাকে লক্ষ্য নিয়েই আমরা পণ্য বাজারজাত করে থাকি। কোরবানি ঈদকে লক্ষ্য রেখে আমাদের ১৫ লাখ ফ্রিজ বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। আশা করছি আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন মো. রফিক। ঘরে ফ্রিজ থাকা সত্ত্বেও নতুন ডিপ ফ্রিজ কিনেছেন। তিনি বলেন, কোরবানির মাংস ফ্রিজিং করতে প্রতিবারই বেগ পেতে হয়। একারণে নতুন ডিপ ফ্রিজ কিনলাম। আসলে ফ্রিজ এখন আর বিলাসি পণ্য নয়, শহুরে জীবনে এটা প্রয়োজনীয় পণ্য। ব্র্যান্ডগুলোও ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ডিসকাউন্ট দিয়ে থাকে।

অন্যদিকে দেশের বাজারে দীর্ঘদিন ধরেই র‌্যাংগস, স্যামসাং, তোশিবা, হিটাচি, প্যানাসনিক, তোশিন ও হাইসেন্স ব্র্যান্ডের ফ্রিজের পাশাপাশি বিভিন্ন পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। কোরবানি ঈদে এই সব পণ্যের চাহিদায়ও ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

রামপুরায় র‌্যাংগস ই-মার্ট শোরুমে গিয়ে দেখা যায় স্যামসাং, হিটাচি ও হাইসেন্সের ফ্রিজের চাহিদা রয়েছে। যদিও এসব ব্র্যান্ডের পণ্যের ক্রেতারা সাধারণত মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত বেশি। 

শোরুম ম্যানেজার মো. তরিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা স্যামসাং, তোশিবা, হিটাচি, প্যানাসনিক, তোশিন, হাইসেন্স ও আস্টরার তৈরি ইলেকট্রনিক পণ্য বিক্রি করে থাকি। কোরবানি ঈদ উপলক্ষে আমাদের রেফ্রিজারেট পণ্যের ওপর ১২ শতাংশ ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়েছে। আর এসি, টিভি ও ওয়াশিং মেশিনের ওপর ১২ শতাংশ ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। তবে এই ঈদে ডিপ ফ্রিজের চাহিদা বেড়েছে।

তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষে বাজারে নিন্মবিত্ত ও মধ্যবিত্তের বিষয়টি মাথায় রেখে বেশ কয়েকটি ডিপ ফ্রিজ বাজারে এসেছে। ২০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামে ওই পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। যে কারণে ফ্রিজে আমাদের বিক্রি ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামী সপ্তাহের এই বিক্রি আরও বাড়বে বলে মনে করছি।

এদিকে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সরকার বিলাসী পণ্য হিসাবে এসব পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে। তারপরও ব্র্যান্ডগুলো প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে ডিসকাউন্ট সুবিধা দিয়ে ক্রেতা আকর্ষণের চেষ্টা করছে।  

আরএম/জেডএস