তানজিমা হকের ঈদ আনন্দটা মনে মনেই। বেশিরভাগ ঈদে বাড়িতে ফেরার সুযোগ হয় না। এই মহা আনন্দের দিনটাও কাটাতে হয় কাজের মধ্যে। আজও তেমন মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই মিরপুরে ‘নগদ’ কল সেন্টারে এসেছিলেন।

অন্যদিনের মতোই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন কাজে। কখন যে সময় কেটে যাচ্ছে, গ্রাহকের প্রশ্নের জবাব লিখতে লিখতে তা টের পাননি। এর মধ্যেই একটা গুঞ্জন শুনে ফিরে তাকালেন। দেখলেন দাড়িয়ে আছেন ‘নগদ’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক স্বয়ং। তানজিমা ফিরতেই তানভীর এ মিশুক বললেন, ‘ঈদ মোবারক।’

এই অনুভূতিটা কিছুতেই ভুলবেন না তানজিমা। তিনি সময়টা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, ঈদের দিন পরিবার ছেড়ে এমন কাজ করাটা আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে। ভেবেছিলাম এবারও এভাবে নিজেদের সময় কাটবে। কল্পনাও করতে পারিনি তানভীর স্যার আমাদের কাছে চলে আসবেন ঈদ করতে। এখন মনে হচ্ছে, এই ঈদটা আসলেই খুশির দিন ছিল।

কেবল তানজিমা নয়, এমন ঈদের অকৃত্রিম ভালোবাসা আজ পেয়েছেন ‘নগদ’ কল সেন্টারে কাজ করা কয়েকশ ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা। সারা বছর এই মানুষগুলোর কণ্ঠই দেশের কোটি মানুষের কাছে ‘নগদ’-এর প্রতিনিধিত্ব করে। এই মানুষগুলোই ২৪ ঘণ্টা সচল রাখেন নগদের কণ্ঠস্বর। আর ঈদের ছুটিতে নিজেও পরিবারের সঙ্গে সময় না কাটিয়ে সেই মানুষগুলোর কাছেই ছুটে গেছেন তানভীর এ মিশুক।

ঈদের দিন কল সেন্টারের এই যোদ্ধাদের জন্য একটু উপহার পাঠিয়ে কাজ সারতে পারতেন। কিন্তু একটা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হয়েও কেক হাতে তার এই ছুটে আসা সবাইকে অবাক করেছে। তানভীর এ মিশুক অবশ্য এতে অবাক হওয়ার কিছু দেখছেন না। তিনি হেসে বলেন, ঈদ তো পরিবারের সঙ্গে কাটানোর উৎসব। আর এরাই তো আমার পরিবার। আজ নগদ যে অবস্থানে এসেছে, তার পেছনে বড় একটা অবদান এই মানুষগুলোর। ওনারাই কিন্তু নগদ নিয়ে সব কথার জবাব দেন মানুষকে। ওনারা আমাদের ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা। আজ এই খুশির দিনে তাদের সঙ্গে একবার দেখা করতে পেরে আমিই খুশি।

তানভীর এ মিশুক যেমন খুশি, তার চেয়ে অনেক বেশি খুশি এখানকার যোদ্ধারা। তাদেরই একজন মোস্তাফিজুর রহমান সাগর বলেন, পরিবার-বন্ধুদের ছেড়ে ঈদের দিনটা কাজ করাটা একটু হলেও কষ্টের। কিন্তু আজ অফিসের এই শীর্ষ কর্মকর্তারা যখন তাদের পরিজনদের রেখে আমাদের পাশে এসে সময় কাটালেন, আমাদের সব কষ্ট দূর হয়ে গেল। আসলে আমরা কল্পনাও করতে পারিনি যে ওনারা এভাবে এসে আমাদের সময় দেবেন।

তানভীর এ মিশুকের এই চলে আসাটা কেবল একটা বেড়াতে আসা নয়, এটা আসলে অন্যরকম একটা পরিবেশ তৈরি করে। নগদ কলসেন্টার পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ডিজিকনের প্রধান বাণিজ্য কর্মকর্তা গৌরব গুপ্তা বলেন, আমি নিজে একসময় কলসেন্টারে এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছি। এরকম উৎসবের দিনে বসরা কেউ যখন আমাদের কাছে আসেন, সেটা আমাদের জন্য অনেক বড় একটা পাওয়া হয়। আজ আমাদের পার্টনার প্রতিষ্ঠানের এমডি স্বয়ং যখন এখানে হাজির হয়েছেন, এটা আসলে আমাদের কাজে নতুন করে অনুপ্রেরণা দিচ্ছে।

ঠিক এই কথাটাই বলছিলেন ডিজিকনের অপারেশন্স ম্যানেজার ইন্দ্রানী দত্তগুপ্ত। তিনি একটু পরিষ্কার করে বলেন, ওনার এই উপস্থিতির ফলে আমরা ম্যাসেজ পেলাম যে আমরা একা নই। আমাদের ফেলে রেখে ওনারা নিজেদের মতো থাকেননি। আমাদের মধ্যেই আছেন। এর ফলে আমাদের আরও ভালো কাজ করার আগ্রহ তৈরি হলো।

সেই আগ্রহটা কল সেন্টার জুড়ে মহা ব্যস্ততায় ফোন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো সামলাতে থাকা মানুষগুলোর চঞ্চলতা দেখেই বোঝা গেল। একেকজন মানুষ যেন নিজের পুরোটা উজাড় করে দিচ্ছেন গ্রাহকের নানা প্রশ্নের জবাব দিতে। এই দৃশ্য দেখে চুপ থাকতে পারলেন না তানভীর এ মিশুক। তিনিও চাইলেন সরাসরি গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলার এই রোমাঞ্চটা টের পেতে।

এক এজেন্টের চেয়ারে বসে একেবারেই অপরিচিত এক ‘নগদ’ গ্রাহকের সঙ্গে আলাপ শুরু করলেন তানভীর এ মিশুক। কয়েকটা সেকেন্ডের মধ্যে নিজেকে একজন দক্ষ এজেন্টে পরিণত করে ফেললেন। গ্রাহকের প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর দিলেন, তার অসুবিধার জন্য নগদ-এর পক্ষ থেকে মার্জনা চাইলেন এবং তার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন। কয়েক মিনিট পর যখন চেয়ার ছেড়ে উঠলেন, তখন তানভীর এ মিশুকের মুখে অন্যরকম এক তৃপ্তির ছোঁয়া।

হেসে বললেন, গ্রাহকের সঙ্গে আগে অনেকবারই কথা বলেছি। কিন্তু কলসেন্টারে বসে অচেনা গ্রাহকের সঙ্গে এভাবে এই প্রথম কথা বললাম। এটা দারুণ এক অনুভূতি। গ্রাহককে ঈদ শুভেচ্ছা জানাতে পেরে খুবই ভালো লাগছে।

কেবল এই পাওয়াতেই আটকে থাকলো না সময়টা। ঈদের দিন রঙিন করতে এবং কর্মকর্তাদের এভাবে কাছে পেয়ে গানের আসর বসিয়ে ফেলেছিলেন কর্মীরা। কখনও আইয়ুব বাচ্চুর গান, কখনও বাপ্পা মজুমদারের গান ছিল তাদের কণ্ঠে। ঘরোয়া এই আসর থেকে বের হতে হতে তানভীর এ মিশুক বলছিলেন, এমন আনন্দ খুব কমই মেলে।

সেই আনন্দের দিনই তো ঈদ।

এসএসএইচ