সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম / ঢাকা পোস্ট

দেশের উন্নয়নের স্বার্থে এবং আর্থিক খাতের কথা বিবেচনা করে খেলা‌পি ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম।

আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ও খেলা‌পি ঋণের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার যুক্তি দেখিয়ে ঋণখেলাপিদের আবারও বড় ছাড় দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। যেখা‌নে মাত্র আড়াই থেকে পাঁচ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিয়ে চারবার ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দেওয়া হয়। গতকাল সোমবার (১৮ জুলাই) এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। যা নি‌য়ে অর্থনী‌তিবিদ ও খাত-সং‌শ্লিষ্ট‌দের সমা‌লোচনার মু‌খে প‌ড়ে আর্থিক খা‌তের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা‌টি। এর ব্যাখ্যা দি‌তেই আজ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, নতুন গভর্নর যোগদানের পর যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেগুলো যুগান্তকারী। একটা সময় সব ঋণে সিঙ্গেল ডিজিট (৯ শতাংশ) বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত ভুল ভাবা হয়েছিল। কিন্তু এখন সেটা বাস্তবায়ন হয়ে গেছে। ঋণ পুনঃতফসিলে যে নতুন প্রজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে, সেটাও কাজ করবে বলে আমরা আশাবাদী। এ  প্রজ্ঞাপন কোনো প্রভাবশালী গ্রুপের চাপে জারি করা হয়নি বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন >> ঋণ খেলাপিদের আবারও বড় ছাড়

তিনি আরও বলেন, এখন থেকে ঋণের ভালো-মন্দের দায় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে নিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক পলিসি দেবে, তবে ঋণের দায়ভার আর নেবে না। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ যে গ্রাহককে ঋণ দিয়েছে, সেটা ভালো হলে পর্ষদের, খারাপ হলেও দায় পর্ষদের ওপর পড়বে। যেহেতু ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে, খেলাপির সুবিধা পর্ষদ দেবে, রি-শিডিউল তারাই করবে। ঋণের ভালো-মন্দের দিকটাও তাদের নিতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, ঋণ নিয়মিত করার ক্ষমতা এখন থেকে পুরোটাই ব্যাংকগুলোর হাতে দেওয়ায় প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা নিয়মিত টাকা ফেরত দেবেন। একই সঙ্গে খেলাপি ঋণ কমে আসবে বলে আমরা আশা করছি। 

‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনেই বলেছিলেন, সেন্ট্রাল ব্যাংক অ্যাপেক্স বডি হিসেবে কাজ করবে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের গ্রাহক চেনেন। ব্যাংকগুলো রি-শিডিউল কীভাবে করবে, তারা তা ঠিক করবে। যেহেতু গ্রাহককে তারা চেনেন। কোন খেলাপিকে কী সুবিধা দেওয়া হবে, এটা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিক করবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ খেলাপিকে সুবিধা দেওয়া নয়। কারণ, ব্যাংকের গ্রাহককে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চেনে না। বাংলাদেশ ব্যাংক ইন্সপেকশন করবে, অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেবে।’

‘সোমবারের সার্কুলারে ঢালাওভাবে খেলাপিকে সুযোগ দেওয়া হয়নি। একটা প্রেক্ষাপটের কারণে সার্কুলার হয়েছে, আবার অনেক সময় পুনরায় সার্কুলারও দেওয়া হয়। অপারেশনাল কাজটা ব্যাংকগুলো নিজেরাই দায়িত্ব নিয়ে করবে। এটা তাদের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এতে জবাবদিহিতা বাড়বে, খেলাপি কমবে। এমন স্বাধীনতা ব্যাংকগুলোর ওপর দেওয়ার ফলে এখন থেকে ব্যক্তি ও বোর্ডের ওপর দায়ভার চলে যায়’— বলেন সিরাজুল ইসলাম।

নতুন ওই সার্কুলার বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর চাপিয়ে দেওয়া কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, ‘বর্তমান গভর্নর পিওর মানুষ, তিনি ব্যাংককে ওন করেন। নিজ উদ্যোগে তিনি কাজ করছেন। কারও চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়নি। এ সার্কুলারের পরে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা নিয়মিত টাকা ফেরত দেবেন এবং খেলাপি ঋণ কমে আসবে। এখন থেকে ঋণ বিতরণকারী জুনিয়র কর্মকর্তাদেরও দায়ী করা হবে। সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্বার্থে ব্যাংকের পর্ষদকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।’

গতকাল সোমবার (১৮ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নির্দেশনা জারি করে। ওই নির্দেশনা মতে, ‘এখন থেকে খেলাপি ঋণে কী সুবিধা দেওয়া হবে তা নির্ধারণ করতে পারবে ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ। ব্যাংকমালিকরাই এখন ঋণখেলাপিদের কী সুবিধা দেওয়া যাবে তা ঠিক করে দেবেন। এতদিন বিশেষ সুবিধায় ঋণ নিয়মিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন লাগত। সেই ক্ষমতা এখন থেকে পুরোটাই ব্যাংকগুলোর হাতে থাকছে।’

নতুন ওই নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, এখন থেকে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে আড়াই থেকে সাড়ে চার শতাংশ অর্থ জমা দিলে হবে। এর আগে নিয়মিত করতে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ অর্থ জমা দিতে হতো। আগে এ ধরনের ঋণ পরিশোধে সর্বোচ্চ দুই বছর সময় পেলে এখন পরিশোধ করা যাবে পাঁচ থেকে আট বছরে। একই সঙ্গে নতুন করেও ঋণ পাওয়া যাবে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘কোভিড- ১৯ এর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব, বহির্বিশ্বে সাম্প্রতিক যুদ্ধাবস্থা প্রলম্বিত হওয়ায় উদ্ভূত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা চলছে। নতুনভাবে কোভিড- ১৯ এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং শ্রেণিকৃত ঋণের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার স্বার্থে ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ সংক্রান্ত নতুন নীতিমালা জারি করা হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক জি এম আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন।

এসআই/এমএআর/