কাগজে কলমে বিশ্বযুদ্ধ না হলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়ছে বিশ্বযুদ্ধের মতই। এ যুদ্ধের ফলে সারা বিশ্ব জ্বালানি, খাদ্যসহ বিভিন্ন সংকটের মুখে পড়েছে। খোলা বাজারে কয়েকগুন হয়ে গেছে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম। ফলে অর্থনৈতিকভাবে দারুন স্বচ্ছন্দ থাকার পরও বাংলাদেশের ওপর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। 

বাংলাদেশের ওপর এই প্রভাব যেন গুরুতর না হয়, সে জন্য রাষ্ট্র নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং নাগরিকদের সাশ্রয়ী হতে বলেছে। আর প্রধাণমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে কৃচ্ছতাসাধন শুরু করেছে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস নগদ।

নগদের এমডি নিজেই প্রধান কার্যালয়ে একের পর এক বিদ্যুৎসাশ্রয়ী পদক্ষেপ নিয়েছেন। দিনের আলোতে আলোকিত হয়, এমন জায়গাগুলোতে বন্ধ রাখা হয়েছে বৈদ্যুতিক বাতি। বিভিন্ন ফ্লোরে অপ্রয়োজনীয় লাইট, ফ্যান এবং এসিগুলোও বন্ধ রাখা হয়েছে। কোনো কোনো কক্ষে দুই একটি এসি সচল থাকলেও তাপমাত্রা রাখা হয়েছে ২৫ ডিগ্রির ঘরে।

সরকার বলেছে, সরকারি অফিস আদালতে বিদ্যুতের খরচ ২৫ শতাংশ কমিয়ে আনা হবে। সেই ঘোষণার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নগদ চেষ্টা করছে ২৫ শতাংশের বেশি বিদ্যুত খরচ কমিয়ে আনার জন্য। 

স্বয়ং তানভীর এ মিশুকের কক্ষে ঢুকলেই চোখে পড়বে এমন সাশ্রয়ের চিত্র। সেখানে দেখা গেলো, লাইটগুলো বন্ধ রেখে দু’পাশের জানালা খুলে দিয়ে দিনের আলোতে কাজ করছেন তিনি। 

নগদের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কক্ষগুলোতেও দেখা যায় একই চিত্র। কেউ দিনের আলোতে বিদ্যুতের ব্যবহার করছেন না। কোথাও প্রয়োজনের তুলনায় লাইট কিংবা এসির বেশি ব্যবহার হচ্ছে কি না, বিভিন্ন ফ্লোর ঘুরে ঘুরে স্বচক্ষে পরিদর্শন করছেন তানভীর এ মিশুক। সবাইকে সচেতন করার পাশাপাশি কর্মীরা যাতে দিনের আলোতে নির্দিষ্ট কাজ সেরে দ্রুত নিজ নিজ বাসায় ফিরে যেতে পারে সেদিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখছেন।

এ বিষয়ে তিনি একটি আনুষ্ঠানিক নির্দেশনাও জারি করেছেন। সেখানে প্রত্যেককে সাশ্রয়ী হওয়ার পাশাপাশি সচেতন হওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিদ্যুৎ ব্যবহারে তিনি সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্ববান জানান।

শুধু নগদের প্রধান কার্যালয় নয়, দেশের অন্যান্য জায়গায় আঞ্চলিক অফিসগুলোতেও একই নির্দেশনা দিয়েছেন তানভীর এ মিশুক।

এ প্রসঙ্গে তানভীর এ মিশুক বলেন, যে কোনো সংকট মোকাবিলায় প্রত্যেকের সহযোগিতা প্রয়োজন। নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে। আমি মনে করি দেশে বিদ্যুৎতের এ সংকটময় মুহূর্তে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব। আর সেটি নিজ ঘর থেকে শুরু হওয়া উচিত। সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতা থেকে আমি আমার বাসা এবং অফিসে ব্যয় কমাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। দেশটা যেহেতু আমাদের সবার, এ সংকট মোকাবিলাও আমাদের সবাইকে করতে হবে।

নগদের মানব সম্পদ বিভাগের প্রধান শাহারিয়ার সাঈদ বলছেন, এ সাশ্রয় কর্মকাণ্ডে তিনি অফিসের সবার অংশগ্রহণ দেখে অত্যন্ত সন্তুষ্ট। ‘আমাদের জন্য ভালো লাগার বিষয় এটি যে, নগদের সব কর্মী বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে পালন করছে। প্রত্যেক তার জায়গা থেকে সচেতন হয়েছে।’

অফিসে বিদ্যুত সাশ্রয় প্রসঙ্গে নগদ-এর ব্র্যান্ড ও ক্রিয়েটিভ কমিউনিকেশন্সের পরিচালক ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘আমরা নগদ থেকে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে একটি স্লোগান ব্যবহার করে থাকি-মানুষ বাঁচলে দেশ বাঁচবে। যে কোনো জাতীয় সংকটে আমরা এই স্লোগান ব্যবহার করে থাকি। এই কথা আমরা বন্যার সময় বলেছি। এখনও বলছি। সারা বিশ্ব এখন জ্বালানির একটা সংকটে পড়েছে। আমাদের তাই নিজেদের স্লোগানটির প্রতিফলন নিজেদেরই ঘটাতে হবে। মানুষের জন্য হলেও আমাদের পাওয়ার সেভিংস করতে হবে। সেই চিন্তা থেকেই আমাদের এমডি নির্দেশনা দিয়েছেন এবং পুরো অফিস এখন বিদ্যুত সাশ্রয় করছে।’

এছাড়া নগদ সম্প্রতি প্রচারের জন্যে স্থাপিত বিলবোর্ডে সৌরশক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পর্যায়ক্রমে প্রতিষ্ঠানটির সব বিলবোর্ডে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। ফলে বিলবোর্ড পরিচালিত হবে প্রাকৃতিক উৎস থেকে পাওয়া শক্তি দিয়ে। এর মাধ্যমে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে তাল মেলানো এবং নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার উৎসাহিত হবে এবং কিছুটা হলেও জনজীবনে স্বস্তি আসবে।

উল্লেখ্য, দেশে দৈনিক ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে বর্তমানে গড়ে উৎপাদন হচ্ছে দৈনিক ১৩ হাজার ৭০ মেগাওয়াট। জ্বালানি স্বল্পতার কারণে ১০০০ থেকে ১৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি রয়েছে। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহের খরচ সারা বিশ্বেই বাড়ছে, যা মূল্যস্ফীতির চাপ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। এটি সারা বিশ্বকেই ভোগাচ্ছে। বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেল ও তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম কমার ওপর নির্ভর করছে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও লোডশেডিং পরিস্থিতির উন্নয়ন।

এসএম