জ্বালানি তেলের দাম এতো বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল না। এটা অপ্রত্যাশিত। এতে অতিরিক্ত মুদ্রাস্ফীতির মুখে পড়বে দেশ। পরিবহন সেক্টরে অতিরিক্ত ভাড়া বৃদ্ধির আগেই সিদ্ধান্ত পুর্নবিবেচনা করা প্রয়োজন।

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব ও করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে শনিবার (৬ আগস্ট) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান ও কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান এবং জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ম তামিম ঢাকা পোস্টের কাছে এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

গোলাম রহমান বলেন, একসঙ্গে এতো দাম বাড়াবে কল্পনাও করা যায়নি। এর ফলে মানুষের জীবনে অস্থির পরিস্থিতি আসবে। সবকিছুর দাম আরও বেড়ে যাবে। এমনিতেই ৮ শতাংশের কাছাকাছি মুদ্রাস্ফীতি। এটা ডাবল ডিজিটে চলে যেতে পারে। মানুষের জীবন ধারণ কষ্টকর হয়ে যাবে। আমাদের আশংকা মানুষের মধ্যে অস্থিরতা কাজ করবে। এমনিতেই মানুষ কষ্টে আছে। সাধারণ মানুষের কষ্ট আরও বেড়ে যাবে।

বিশ্ব বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় দাম কিছুটা বৃদ্ধির পক্ষে মত দিয়ে ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, যেহেতু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সেহেতু জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা ছিল। কিন্তু যা বৃদ্ধি করা হয়েছে, সেটা অপ্রত্যাশিত। এতোটা বাড়ানো যৌক্তিক হয়নি। মানুষের কল্যাণ দেখতে হবে আগে। মানুষ কতটা বোঝা বহন করতে পারে, এর মাধ্যমে বোঝা অতিরিক্ত হয়ে গেল। দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবহন ব্যয় বাড়বে। সব পণ্যের ওপর প্রভাব পড়বে। এর ফলে সরকারের যত অর্জন ম্লান হয়ে যেতে পারে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম তামিম তেলের দাম বৃদ্ধিকে কোনো যুক্তিতেই সমর্থন করেন না। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে এখন তেলের দাম পড়তির দিকে, এ সময় জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করার দরকার ছিল বলে আমি মনে করছি না। আর এতোখানি বৃদ্ধি তো আদৌ দরকার ছিল না। সরকার কি মনে করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমি জানি না।

তিনি বলেন, এর ফলে প্রচণ্ড মুদ্রাস্ফীতি হবে। এর প্রভাব অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে কেমন পড়বে সেটা সময়ই বলে দেবে। এখন না বাড়ালেও হয়ত সামান্য কিছু ভর্তুকি দিতে হতো। সরকার অতীতেও ভর্তুকি দিয়েছে। যেখানে আমরা দেখতে পারছি বিশ্ব বাজারে দাম কমে আসছিল। সামনে আরও দাম কমবে। তারপরও কেন আমাদের দেশে দাম বৃদ্ধি করা হলো আমি জানি না। এরপর সরকার হয়ত জ্বালানি খাত থেকে মুনাফা করবে।

আইএমএফসহ দাতা সংস্থাগুলো থেকে ঋণ নেওয়ার শর্ত পূরণ করতে গিয়ে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা হতে পারে। যেহেতু দাতা সংস্থাগুলোর শর্ত ছিল দাম বৃদ্ধি করার, সেক্ষেত্রে এমন হতে পারে।

করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা পোস্টকে তামিম বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তকে পুর্নবিবেচনা করা উচিত। আজকে আমরা দেখছি গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। অতিরিক্ত ভাড়া বৃদ্ধির আগেই যদি সরকার বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে পুনর্বিবেচনা করে, তাহলে সেটা ভালো হয়।

এ প্রসঙ্গে গোলাম রহমান বলেন, আমার মতে করণীয় বলতে মানুষের আয় বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নিতে হবে। এখনই চাপ আসবে সরকারের কর্মচারীর বেতন বৃদ্ধির। মানুষের আয় ও কর্মসংস্থান যদি বৃদ্ধি করা যায়, তাহলে হয়ত নেতিবাচক প্রভাব কিছুটা কাটানো সম্ভব হবে।

এর আগে সকালে এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রায় একই ধরণের মন্তব্য করেছেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকার জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা সাম্প্রতিক বছরগুলোর হিসাবে সর্বোচ্চ। সেটা সামগ্রিকভাবে জীবনযাত্রার ব্যয় বহুলাংশে বৃদ্ধি করবে বলে আশঙ্কা করা যায়। মূলত ডিজেলের ব্যবহারে যে খাতগুলোতে বেশি ব্যয় হয়, যেমন পরিবহন, কৃষিখাত, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে, সেক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির ফলে ভোক্তার ওপর পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি প্রতিক্রিয়া হিসাবে আসবে।

শুক্রবার রাত ১২টার পর জ্বালানি তেলের নতুন দাম কার্যকর হয়েছে। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, পেট্রোলের দাম ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা এবং অকটেনের দাম ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা করা হয়েছে।

আরএম/জেডএস