জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার ফ‌লে রপ্তা‌নি খাত হুমকির মুখে পড়ে‌ছে ব‌লে জা‌নি‌য়ে‌ছেন ব্যবসায়ী‌দের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি বা ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (এফবিসিসিআই‌য়) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।

শ‌নিবার (৬ আগস্ট) এফবিসিসিআই কার্যালয়ে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে সাংবা‌দিক‌দের সঙ্গে আলাপকালে তি‌নি এ কথা জানান।

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃ‌দ্ধি প্রস‌ঙ্গে এফবিসিসিআই‌য়ের সভাপতি ব‌লেন, হঠাৎ দাম বাড়ায় বড় ধাক্কা আস‌বে। বর্তমান প‌রি‌স্থি‌তি‌তে একস‌ঙ্গে ৪০ থে‌কে ৫০ শতাংশ মূল্য না বা‌ড়ি‌য়ে সরকার চাইলে ধাপে ধাপে বাড়াতে পারতো। এ‌তে ক‌রে সরাস‌রি প্রভাব পড়‌তো না।

হঠাৎ করে এত বেশি দাম বাড়ানোর কারণে এর প্রভাব আমাদের কৃষিতে পড়বে, পরিবহন-যাতায়াতে পড়বে, মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। সর্বোপরি সাধারণ মানুষ ভুক্তভোগী হবে- উল্লেখ করেন এফবিসিসিআই‌ সভাপতি।

ব্যবসায়ী নেতা জসিম উদ্দিন ব‌লেন, চলমান পরিস্থিতিতে তেলের দাম বাড়ানো খুবই চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করবে। এতে করে দেখা যাবে ‌মিড লে‌ভে‌লের যেসব ব্যবসায়ী আছে তারা সমস্যায় পড়বে।

‘ইউরোপ-আমেরিকার অবস্থা খুব একটা ভালো না। যে পরিমাণ অর্ডার আসতেছে ইতোমধ্যে আমাদের তিন মাসের গ্যাপ সৃষ্টি হয়েছে। এখন বাস্তবতা বা আমরা কী পরিস্থিতিতে আছি এটা বোঝাতে হলে ‘মরিয়া প্রমাণ করিতে হবে আমি মারা গেছি।’

‌তি‌নি বলেন, যখন চাহিদা কম থাকে তখন ক্রেতা প্র‌তিষ্ঠান দাম কমানোর বিষ‌য়ে একটা চাপ সৃষ্টি করে। এখন ডিমান্ড কমে গেছে, বায়াররা প্রেসার সৃষ্টি করবে প্রাইজ কমানোর জন্য। তাই এখন ফ্যাক্টরি টিকে রাখার জন্য কম দামে পণ্য তৈরি করতে হবে। ব্যবসা চ্যা‌লে‌ঞ্জে পড়‌বে।

জসিম উদ্দিন বলেন, এখন বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম নিম্নমুখী। এমন অবস্থায় সরকার নিশ্চয়ই কোনো বিষয় বিবেচনা করে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে। আমরা কালকে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী সঙ্গে আলোচনা করব, তখন আমরা বুঝতে পারবো আসল বিষয়টা কী?

এর আগে যখন জ্বালানি তেলের দাম কম ছিল তখন সরকার এই খাত থেকে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে। সরকার চাইলে এখন ওই অর্থ থেকে সমন্বয় করতে পারত। অনেকবার বলেছি জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করার জন্য কিন্তু সরকার করেনি। এখন একসঙ্গে যে পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে তা সহনীয় পর্যায় নয়। এছাড়া আমরা শুনেছি পার্শ্ববর্তী দেশে দাম বেশি হওয়ায় এখান থেকে জ্বালানি তেল পাচার হয়ে যাচ্ছে। এটা বন্ধ করতে সরকার সমন্বয় করেছে, তবে আগামীকাল আলোচনা করে আমরা এটা জানতে পারবো।

শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টার পর থেকে ডিজেল ও কেরোসিন ১১৪ টাকা প্রতি লিটার, অকটেন ১৩৫, পেট্রোল ১৩০ টাকা প্রতি লিটার নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপপ্রধান তথ্য অফিসার মীর মোহাম্মদ আসলাম উদ্দিনের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

আগে ভোক্তা পর্যায়ে খুচরা মূল্য ছিল প্রতি লিটার ডিজেল ৮০ টাকা, কেরোসিন ৮০ টাকা, অকটেন ৮৯ টাকা ও পেট্রল ৮৬ টাকা। ওই দর গত বছরের ৩ নভেম্বরে বাড়ানো হয়। সেসময় জানানো হয়, ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য প্রতি লিটারে ভোক্তা পর্যায়ে ১৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ কেরোসিন ও ডিজেল ৬৫ টাকা থেকে বেড়ে ৮০ টাকা করা হয়েছিল। তবে সেসময় অকটেন ও পেট্রোলের দাম বাড়ানো হয়নি।

ত‌বে এবার আ‌গের যে‌কো‌নো সম‌য়ের তুলনায় স‌র্বোচ্চ দর বাড়া‌নো হয়ে‌ছে।

এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, জনবান্ধব আওয়ামী লীগ সরকার সবসময় আমজনতার স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়। যতদিন সম্ভব ছিল ততদিন সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ানোর চিন্তা করেনি। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকটা নিরুপায় হয়েই কিছুটা অ্যাডজাস্টমেন্টে যেতে হচ্ছে। ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য কমিয়ে দিয়েছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সে অনুযায়ী জ্বালানি তেলের মূল্য পুনর্বিবেচনা করা হবে।

এসআই/এসএম