সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত কমিটির সভায় আরএডিপির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। 

সংশোধিত এডিপিতে বৈদেশিক ঋণের অর্থ কমছে ৭ হাজার ৫০১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এছাড়া পরিবহন খাতে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা কমলেও পানি সরবরাহ এবং আবাসন খাতে বাড়ছে প্রায় ৭শ কোটি টাকা। আগামী ২ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় আরএডিপি চূড়ান্ত করা হবে বলে বর্ধিত সভা সূত্রে জানা গেছে।

এডিপির খসড়ায় দেখা গেছে, পরিবহন খাতে চলতি অর্থবছরের মূল বরাদ্দের চেয়ে ২ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা ছেঁটে ফেলা হচ্ছে। সর্বাধিক অগ্রাধিকার পাওয়া খাতটিতে প্রস্তাবিত সংশোধিত এডিপিতে (আরএডিপি) ৪৯ হাজার ২১২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে, যা মূল এডিপিতে ছিল ৫২ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা। এছাড়া বিদ্যুৎ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতেও বরাদ্দ উল্লেখযোগ্যভাবে কমছে।

দ্বিতীয় অগ্রাধিকারভিত্তিক ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও আবাসন খাতে বরাদ্দ দেওয়া হবে ২৬ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা, যা মূল বরাদ্দে ছিল ২৫ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা। এ হিসাবে বরাদ্দ বাড়ছে ৬৯৬ কোটি টাকা। অন্যদিকে এডিপিতে স্বাস্থ্য, পুষ্টি জনসংখ্যা এবং পরিবারকল্যাণ খাতে বরাদ্দ ছিল ৪ হাজার ৩২১ কোটি টাকা। সেখান থেকে ৩ হাজার ৫৩৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা বাড়িয়ে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ৭ হাজার ৮৫৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা।

পরিকল্পনা কমিশন বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে বরাদ্দ পুনরায় বিতরণের পর চলতি অর্থবছরের জন্য ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকার আরএডিপির খসড়া চূড়ান্ত করেছে। চলতি অর্থবছরে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬১১ কোটি টাকা এডিপি বাস্তবায়ন করছে সরকার। এরমধ্যে সরকারি তহবিল ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা বা ৬২ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং বৈদেশিক সহায়তা ৭০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা বা ৩২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। সংশোধিত এডিপির জন্য এ বরাদ্দ কমিয়ে ধরা হয়েছে ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাবে বৈদেশিক অংশে বরাদ্দ কমছে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা। 

চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দ থেকে ব্যয় করতে পেরেছে ১৭ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২৪ দশমিক ৯১ শতাংশ। ব্যয় করতে না পারায় অর্থ ফেরত দিয়েছে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো। গত অর্থবছরে একই সময়ে ব্যয় হয়েছিল ১৭ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা বা ২৪ দশমিক ৪১ শতাংশ। এডিপির খসড়ায় খাত হিসাবে সবচেয়ে বেশি কমেছে বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের বরাদ্দ। এ খাতে মোট বরাদ্দ ছিল ১৩ হাজার ১২১ কোটি টাকা। সেখান থেকে ৫ হাজার ৩৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা কমিয়ে সংশোধিত বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৮১ কোটি ২৭ লাখ টাকা।

অন্যান্য খাতের বরাদ্দ
কৃষি খাতে মূল বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা। এখন প্রস্তাব করা হয়েছে ২ হাজার ৫৮২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। পল্লী-উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৬৬৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এখন এ খাতে প্রস্তাব করা হয়েছে ৩ হাজার ৪৮২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। পানিসম্পদ খাতে ৪১৬ কোটি টাকার স্থলে ৬৭৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে ১১ হাজার ৫৯৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকার স্থলে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১১ হাজার ১৩৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।

খসড়ায় দেখা গেছে, তৈল, গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ খাতে ৭৬২ কোটি ৬৫ লাখ টাকার স্থলে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৮৫৪ কোটি টাকা। পরিবহন খাতে ১৯ হাজার ৬৩২ কোটি ১৬ লাখ টাকা থেকে কমিয়ে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৩৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। যোগাযোগ খাতে ১ হাজার ৩৪ কোটি ২৬ লাখ টাকার স্থলে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৮১০ কোটি ৯২ লাখ টাকা। 

এছাড়া ভৌত পরিকল্পনা ও পানি সরবরাহ খাতে ৬ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ৪ হাজার ৫৬২ কোটি ২৬ লাখ টাকা। শিক্ষা ও ধর্ম খাতে ২ হাজার ২৬৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকার স্থলে ১ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে। গণসংযোগ খাতে ২২ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে সাড়ে ১৬ কোটি টাকা।

পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের প্রধান খোন্দকার আহসান হোসেন বলেন, চাহিদার ভিত্তিতে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জন্য বরাদ্দ প্রস্তাব বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়। বৈঠকে খসড়া বরাদ্দের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে এনইসির বৈঠকে প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হবে। তিনি বলেন, কমানো অর্থ বিদেশি উৎস থেকে কেটে নেওয়া হবে এবং সরকারি নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ অপরিবর্তিত থাকবে।

এসআর/আরএইচ/এইচকে