বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে দাবি করেছে উৎপাদন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো মনে করেছে, প্রতিনিয়ত চতুরতার আশ্রয় নিচ্ছে উৎপাদন ও বিপণন প্রতিষ্ঠানগুলো। উৎপাদন বা পরিবহন খরচ যতটা বেড়েছে তার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি বাড়ানো হচ্ছে পণ্যের দাম।

বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ভোক্তা অধিদপ্তরের সভাকক্ষে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ভোক্তা ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে মতবিনিময় সভায় অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নিত্যপণ্যের যৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে চায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সভায় এ সিদ্ধান্তের কথা জানান ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।

আমদানিকারক ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা বলেছেন, ২০২০ সালের শেষের দিক থেকে এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দামসহ উৎপাদন খরচ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। কিন্তু পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে এর অর্ধেক। বিগত সময়ে দাম সমন্বয়ও করা হয়নি। 

এ অবস্থায় কোম্পানিগুলোর পিঠ এখন দেওয়ালে ঠেকেছে। এর কিছুটা চাপ পড়ছে ভোক্তাদের ওপরে। ২০২০ সালে আধা কেজির যে ডিটারজেন্টের দাম ছিল ৬০ টাকা, সেটি এখন ৯০ টাকা। ৫২ টাকার সাবানের দামও এখন ৭৫ টাকা। অর্থাৎ এ দুই পণ্যের দাম বেড়েছে ৪৪ শতাংশ পর্যন্ত।

কারণ হিসেবে কোম্পানির প্রতিনিধিরা বলেছেন, তাদের টয়লেট্রিজ পণ্যের ৮০ শতাংশ কাঁচামালই আমদানি করতে হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে এসব কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে উৎপাদন খরচ বেড়েছে ৯৬ শতাংশ পর্যন্ত।

সভায় কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) প্রতিনিধি কাজী আব্দুল হান্নান বলেন, ব্র্যান্ড ভ্যালু আর মানুষের ইমোশনকে পুঁজি করে বড় কোম্পানিগুলো ভোক্তাদের ব্ল্যাকমেইল করছে কি-না, সে বিষয়ে নজরদারির সময় এসেছে।

তিনি বলেন, ভ্যাট যুক্ত না পরে যুক্ত হবে সেটা অবশ্যই পণ্যের মোড়কে উল্লেখ করতে হবে। একই পণ্যে দুইবার ভ্যাট দিতে চাই না। দিন শেষে কিন্তু আমরা সবাই ভোক্তা। বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।

ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, কোনো পণ্যের দাম বাড়াতে হলে তার পক্ষে যৌক্তিক কারণ দেখাতে হবে কোম্পানিগুলোকে। সেজন্য তাদের ফ্যাক্টরিতে আমরা যাব। কত দামে কাঁচামাল আমদানি হচ্ছে, কোন পণ্য উৎপাদনে কত খরচ হচ্ছে এবং কোন পণ্য কী দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে সেগুলো আমরা বিশ্লেষণ করতে চাই। পরবর্তী সময়ে আমরা পর্যবেক্ষণের বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে প্রতিবেদন দেব। এরপর বিষয়গুলো নিয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।

সভায় ইউনিলিভারের সিএফও জাহিদ মালিথা, স্কয়ারের হেড অব অপারেশন মালিক সাইদ, এসিআইয়ের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ পলাশ হোসাইনসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন।

এমএইচএন/ওএফ