কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, গত তিন বছর প্রতিটি মুরগির বাচ্চা (একদিনের) উৎপাদনের পেছনে ৩০-৩৫ টাকা খরচ করেতে হয়েছে খামারিদের। কিন্তু সেই বাচ্চা বিক্রি করেছে মাত্র ১০ থেকে ১২ টাকায়। এমনও হয়েছে, বিক্রি করতে না পেরে বাচ্চা মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে। এ কারণে এখন ডিম ও মুরগির সংকট দেখা দিয়েছে।

রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে প্রাণিসম্পদ খাতে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধিতে এবং  প্রাণিবিমা সম্প্রসারণে নতুন শিল্প বিপ্লব প্রযুক্তির ভূমিকা : আমাদের অবস্থান ও করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, তবে আশার দিক হলো এখন খামারিরা আবারও বাচ্চা পালন শুরু করেছেন। শিগগিরই ডিম এবং মুরগির উৎপাদন বাড়বে। আগামী কিছুদিনের মধ্যেই ডিমের দাম কমে যাবে।

একজনের দুটি গরু থাকলে পরিবারের কোনো অভাব বা কষ্ট হবে না উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, বর্তমান প্রযুক্তির ব্যবহার করে একটি গাভী থেকে ২৮ লিটার পর্যন্ত দুধ উৎপাদন করা যায়। তারপরও কেন বিদেশ থেকে ২০০০ কোটি টাকার দুধ কিনতে হবে।

এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুল্যাহ হারুন পাশা, কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইসমাইল হোসেন, কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ, ভেটেরিনারিয়ান ও কলামিস্ট ড. আওলাদ হোসেন।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, একটি গাভীর দাম ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা। এই গাভীর বিমা করা জরুরি, বিমার ওপরে মানুষের বিশ্বাস নেই। বিমা কোম্পানিগুলো মানুষের সঙ্গে চিট করে।

অতিরিক্ত সচিব আবদুল্যাহ হারুন বলেন, আমাদের দেশ বিমা বান্ধব না, বিমা বান্ধব হতে হবে। উন্নত দেশে বিমার হার ১০ থেকে ১২ শতাংশ। আমাদের টার্গেট ছিল ৪ শতাংশ, আছে মাত্র ১ শতাংশ।

এর আগে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় প্রকল্প সমন্বয়কারী, ইউনিটডো, বাংলাদেশ এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ডা. আইনুল হক।

এরপর প্রাণিসম্পদ খাতে অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধিতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব প্রযুক্তির ভূমিকা : আমাদের অবস্থান ও করণীয় শীর্ষক প্যানেল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভা সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও বিমা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাসিনা শেখ। এতে বক্তব্য রাখেন এলডিডিপি ও ডিএলএস টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর ড. গোলাম রাব্বানী, ব্যাংক এশিয়ার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী, গ্রিন ডেল্টা ইন্সুরেন্সের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মইনুদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ফাইনান্সের সিইও ও এমডি কায়সার হামিদ এবং বেসিসের স্ট‍্যান্ডিং কমিটি-ফিনটেক ও ডিজিটাল পেমেন্টের চেয়ারম্যান এ কে এম ফাহিম মাশরুর।
 
বক্তারাও জানান, বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা, সুষম পুষ্টি, বেকার সমস্যার সমাধান ও আত্মকর্মসংস্থার সৃষ্টি, নারীর ক্ষমতায়ন, কৃষি জমির উর্বরতা বৃদ্ধি, মেধাসম্পন্ন জাতি গঠন, বৈদেশিক আমদানি নির্ভরতা কমাতে প্রাণিসম্পদের ভূমিকা অপরিসীম। বর্তমানে জিডিপিতে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান ১ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং প্রবৃদ্ধি তিন দশমিক ১০ শতাংশ। কৃষি ক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদের অবদান ১৬ দশমিক ৫২ শতাংশ, যা জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ মানুষকে প্রত্যক্ষ এবং পঞ্চাশ শতাংশ মানুষকে পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত করে।

গবাদিপ্রাণীর খামার দ্রুত বর্ধনশীল ও সম্ভাবনাময় একটি খাত হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে উল্লেখ করে বক্তারা আরও বলেন, অসংখ্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা এ ব্যবসা শুরু করেছে। উৎপাদন, বিপণন, সরবরাহ ও যোগদান প্রতিটি পর্যায়ে ধারাবাহিক বৈচিত্র্যতা থাকায় এই খাতে যেমন সম্ভাবনা রয়েছে, আছে নানাবিধ ঝুঁকি। যার কারণে প্রাণিসম্পদ খাতে বিনিয়োগ ক্ষুদ্র ঋণ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রাণিসম্পদ খাতে বড় আকারে ঋণ দেওয়া নিরাপদ মনে করবেন না। যার কারণে নতুন নতুন উদ্যোক্তারা প্রায়ই বিভিন্ন প্রতিকূলতার সম্মুখীন হচ্ছেন। কিন্তু সম্প্রসারণ বিনিয়োগ বাড়াতে পারলে একদিকে পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে, তেমনি বেকার জনগোষ্ঠীর বিকল্প কোনো সংস্থান তৈরি হবে।

এমআই/এসএম