পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মাইডাস ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, ঋণ বিতরণে অনিয়ম, দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা শামীম আহমেদ। তিনি প্রতিষ্ঠানটির সাবেক প্রশাসন, মানবসম্পদ ও এস্টেট ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা।

বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে মাইডাসের অনিয়ম নিয়ে ৭৪ পৃষ্ঠার একটি বই প্রকাশ করেছেন তিনি। 

শামীম আহমেদ বলেন, প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরে সংঘটিত দুর্নীতি নিয়ে আরও একটি বই আসছে। বইটি লেখার কাজ শেষে শুরু হচ্ছে ছাপার কাজ। এই বইটিতে প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরে সংঘটিত দুর্নীতি, দুঃশাসন, কূটকৌশলসহ নানা বিষয় থাকবে বলে জানিয়েছেন। একই সঙ্গে এসব অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে তিনি বিচার বিভাগীয় তদন্তও চেয়েছেন।

তবে প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ও সাবেক পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করলেও এসবের কোনো তথ্য উপাত্ত দেখাতে পারেননি শামীম আহমেদ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শামীম আহমেদ বলেন, ‘২০০৬ সালে থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১৫ বছর প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু বেতন পেয়েছি সাড়ে ৭ বছরের। তারপরও সম্পূর্ণ বে-আইনিভাবে আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, গত ১৫ মাসে চাকরি ফিরে পেতে কোম্পানি, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ৩৫০টি আবেদন জমা দিয়েছি। কিন্তু অদ্যাবধি কোনো নির্বাহী দপ্তর বা সংশ্লিষ্ট বিভাগে থেকে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

এসময় সংবাদ সম্মেলনে তার সঙ্গে হাবিব উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি (মাইডাসের আমানতকারী) উপস্থিত ছিলেন।

শামীম আহমেদ প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিকুল আযম ও পর্ষদ সদস্য সামছুল আলমের বিরুদ্ধে নিজ নামে ঋণ অনুমোদন, জাল-জালিয়াতি, দুর্নীতির প্রমাণ নষ্ট করতে ঘুষ, নারী কেলেঙ্কারি, বেতন-ভাতা ম্যানিপুলেশন, মাদক কারবার ও কোম্পানির গাড়ি-বাড়ি দখলসহ বিস্তর অভিযোগ তুলে ধরেন। এছাড়া বর্তমান কোম্পানির সচিব তানভীর হাসানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও নানা কূটকৌশলের অভিযোগ আনেন।

মাইডাস ফাইন্যান্সের খেলাপি ঋণ প্রায় ৫০ শতাংশ দাবি করে তিনি বলেন, নানা দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে প্রায় ধ্বংসের পথে প্রতিষ্ঠানটি। অনিয়ম দুনীর্তির তথ্য প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারহোল্ডার, বিনিয়োগকারী ও আমানতকারীদের জানানো নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে হয়েছে। এসব অপকর্মে জড়িতদের শাস্তি হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি। তাই বিষয়টি জনসম্মুখে আনতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।

যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, জুন শেষে প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ প্রায় ১৯ শতাংশ। কিন্তু এ তথ্য তিনি অস্বচ্ছ বলে দাবি করেন।

শামীম আহমেদ বলেন, ঋণ বিতরণে অনিয়ম ও যোগসাজশের কারণে বিতরণ করা অর্থ ফেরত আসছে না। এ অবস্থায় আমানতকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। আমানতের টাকা ফেরত পাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিবিড় তদারকি না হলে পিপলস লিজিংয়ের অবস্থা বরণ করতে হবে। এর মাধ্যম বিপুল সংখ্যক আমানতকারীর স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমের সহযোগিতায় ঋণের নামে মাইডাস থেকে টাকা বের করে নিয়ে গেছে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকদের মধ্য থেকে আপত্তি তুললে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন নির্বাহী পরিচালকের ভয় দেখানো হতো। এর ফলে ঋণ বিতরণ হলেও সে ঋণের টাকা ফেরত আসার সম্ভাবনা খুবই কম। একজন পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক যোগসাজশ করে নিকটত্মীদের মধ্যে এ ঋণ বিতরণ করার কারণে ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করেও অনিয়ম করে খেলাপি দেখানো হচ্ছে না। এতে প্রতিষ্ঠানের ভেতরের অবস্থা খারাপ হলেও কৃত্রিমভাবে বাইরে ভালো দেখানো হচ্ছে।

কর্মচারী ছাঁটাইয়ের ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারী আচরণ করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কর্মচারীদের ছাঁটাইয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিদের্শনা মানছে না। কোন কোন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তদন্তে গেলে প্রভাব বিস্তার করে ছাঁটাই করা কর্মীকে আইনি অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।

মাইডাস ফাইন্যান্সের বিরুদ্ধে শামীম আহমেদের করা অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কোম্পানি সচিব তানভীর হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা, বনোয়াট, ভিত্তিহীন। চাকরি হারানোর পর বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, দুদকসহ অনেক জায়গায় শামীম আহমেদ অভিযোগ করেছেন। প্রতিষ্ঠানগুলো তার অভিযোগ তদন্ত করেছে, কিন্তু কোনো সত্যতা পায়নি।

এমআই/এসএম