আব্দুল আজীজ চৌধুরী। শুধু একটি নামই নয়; একটি ইন্সটিটিউট। যেখান থেকে হাজার মানুষ শিখেছে, আজও শিখছে। জীবন সংগ্রামের হাতিয়ার পেয়েছে এবং পাচ্ছে তারই কল্যাণে। কে জানতো এই মহান, পরোপকারী, হৃদয়বান মানুষ অকালে পরপারে চালে যাবেন!

তবে আব্দুল আজীজ চৌধুরী চলে গেলেও তার কর্মযজ্ঞ থেমে নেই। তার হাল ধরেছেন তারই বড় পুত্র সালাউদ্দিন চৌধুরী। তার সৃজনশীল দৃঢ়তায় আব্দুল আজীজ চৌধুরীর স্বপ্ন আজ বাস্তবায়নের পথে।

গাজীপুরের ভোগরা, চৌধুরী বাড়ি অজপাড়াও এখন আধুনিক বাণিজ্যিক এলাকায় রূপান্তরিত। কে জানতো গাজীপুরের ভোগড়া চৌধুরী বাড়ী একদিন হাজারও মানুষের পদচারণায় মৌ মৌ করবে। আর এখানে জীবিকার মিলন ঘটবে!

কেউ না জানলেও আজীজ চৌধুরী ঠিকই অনুধাবন করেছিলেন; বুঝেছিলেন এখানেই শিল্প-প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব। অজপাড়াও হতে পারে শিল্প এলাকা। তার সেই ভাবনা-স্বপ্নকে তিনি সবকিছু মারিয়ে নেমে পড়েছিলেন কঠোর যুদ্ধে সুযোগ্য ছেলে সালাউদ্দিন চৌধুরীকে নিয়ে।

আজীজ চৌধুরী তো এমনই। তিনি সবসময় স্বপ্ন দেখতেন দেশ ও দেশের মানুষ নিয়ে। যারা ভাতে-মাছে স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকবে। কোনো কষ্টের দাগ বা আঁচড় মানুষের জীবনকে অমানিশায় ঠেলে দেবে তিনি সেটা ভাবতেই নারাজ। বীর বাঙালিরা এভাবেই মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেন; এটাই তারা করে দেখালেন।

তাদের কঠোর পরিশ্রম-মেধা ও মননকে কাজে লাগিয়ে স্বপ্নজয়ের পথেই হাঁটলেন। বাকিটা ইতিহাস! না; মোটেও তা নয়। বাকি সমৃদ্ধ পথের রচয়িতা তারই সুযোগ্য সন্তান এবং সবসময়ের সঙ্গী; সালাউদ্দিন চৌধুরী।

সময়ের পরিক্রমায় গাজীপুরের ভোগড়া চৌধুরী বাড়ি এখন সত্যি সত্যি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকা। এখানে এখন দেশি-বিদেশি স্বনামধন্য কোম্পানি তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছে। যেখান থেকে দেশ ও দেশের মানুষ পাচ্ছেন হরেক রকম সুবিধাদি।

সেই কর্মযজ্ঞ আজ পূরণ হয়েছে সালাউদ্দিন চৌধুরী নিপুণ হাতে। পাশে বড় সাপোর্ট পেয়েছেন তার সুশিক্ষিত সহধর্মিণী মাকসুদা চৌধুরীকে। কী আর চাই। বাবার লালিত স্বপ্নকে যে আরও বড় করতে হবে। তবেই না শান্তি।

মাকসুদা মিশা চৌধুরী বলেন, আমার শ্বশুর ছিলেন একজন সৃজনশীল মানুষ ও সত্যিকারের স্বপ্নদ্রষ্টা। শুধু স্বপ্ন দেখেই তিনি ক্ষান্ত থাকতেন না। সেটাকে বাস্তবায়নে তার ছিল কঠোর অধ্যবসায়। যে কারণে অনেকে তাকে কাজ পাগল মানুষ বলতো।

আমার শাশুড়ির সাথে সাথে আমার বাবা-মাও ছিলেন তার খুব কাছের বন্ধু। আব্দুল আজীজ চৌধুরী যখন এই গাজীপুরে পারিবারিক ব্যবসার অংশ হিসেবে সিনেমা হল ও পেট্রোল পাম্প শুরু করেছিলেন; তখন অনেকেই তাকে নিরুৎসাহিত করেছিলেন। পরে তিনি সময়ের কথা মাথায় রেখে আজীজ চৌধুরী শিল্প কমপ্লেক্স করার সিদ্ধান্ত নিলেন। যদিও সেটা ছিল তখন বেশ ঝুঁকির।

তবুও তিনি ভেবেছিলেন, ব্যবসা করতে হলে, এখানকার মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে হলে ইন্ডাস্ট্রি দরকার। সেকারণেই শিল্প কমপ্লেক্স করা, তাও আবার ব্যাংকের দ্বারস্থ হয়ে। এত বড় কাজে হাত দেওয়া শুধু তার পক্ষেই সম্ভব।

পরবর্তীতে বাবার কাছে শুনেছি, বাবা বলতেন, ভালো কাজ টাকার জন্য কখনো থেমে থাকে না। তাদেরও থাকেনি। এরপর পরই রানা প্লাজায় ধস নামে। সারা দেশের গার্মেন্টস শিল্প নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম হয়। তবুও হাল ছেড়ে দেননি সাহসী সৈনিক আব্দুল আজীজ চৌধুরী এবং সালাউদ্দিন চৌধুরী।

ফলশ্রুতিতে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজীজ চৌধুরী শিল্প এস্টেট আজ সফলতার আরেক নাম। আব্দুল আজীজ চৌধুরীর বড় ছেলে সালাউদ্দিন চৌধুরী বলেন, বাবার চিন্তা-ভাবনা ছিল সুদূর প্রসারী। তিনি ইন্টারন্যাশনাল পলিসি বের করে নিয়ে আসতেন। তবে এতটুকু বুঝেছি, তিনি ছিলেন একজন খাঁটি সোনা। তিনি মানুষের কল্যাণে সবসময় নিজেকে নিবেদিত রাখার চেষ্টা করতেন। তার সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেও গড়ে তুলেছেন মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা। আসলে আব্বা ছিলেন আমাদের মাথার ছাতা। যে ছাতার ছায়াতলে থেকে আমরা মানুষ হতে পেরেছি। তিনি কখনো বিলাসিতা করেননি।

বর্তমানে আব্দুল আজীজ চৌধুরী ও সালাউদ্দিন চৌধুরীর গড়ে তোলা আজীজ চৌধুরী কমপ্লেক্সে রয়েছে নামীদামি অনেক ব্যান্ড কোম্পানি। বেশ কয়েকটি খ্যাতনামা টেক্সটাইল-গার্মেন্টস, ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল কোম্পানি অপো, শাওমি ও আইটেল। সুযোগ্য উওরসূরি সালাউদ্দিন চৌধুরী তার কাজকে করছেন আরও অনেক আলোকিত এবং ইতিমধ্যেই দেশ ও সমাজকে দিয়েছেন অনেক, যা যুব সমাজের জন্য অনুকরণীয়।

এর জন্যই তার পুত্রবধূ মাকসুদা চৌধুরী বলেন, শ্বশুরের উৎসাহে এতটুকু আসতে পেরেছি; আজ তিনি নেই, তবে তার কর্মের মাঝে বেঁচে থাকবেন আজীবন। নক্ষত্র হয়ে হাজার মানুষের মণিকোঠায় আজিজ চৌধুরী আছেন এবং থাকবেন।