সন্তানকে দুধ খাওয়ানোর জন্য কাজের বিরতি ও ব্যক্তিগত জায়গার ঘাটতিসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় ভোগেন পোশাক কারখানায় কাজ করা মায়েরা। যে কারণে শিশুর সুস্বাস্থ্য, সুখী পরিবার গঠনসহ কর্মক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতায় দেখা দেয় ঘাটতি।

এসব সমস্যা থেকে উত্তরণে ‘মাদারস অ্যাট ওয়ার্ক’ নামক বিশেষ একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে ইউনিসেফ। এই প্রকল্পের অধীনে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) ও বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) পোশাক কারখানায় সন্তানকে দুধ খাওয়ানোর জায়গা ও বিরতি পাবেন মায়েরা।

এ ছাড়াও শিশুদের যত্নের সুবিধা, বেতনসহ মাতৃত্বকালীন ছুটি, নগদ সুবিধা, স্বাস্থ্যসেবা, চাকরির সুরক্ষা এবং কর্মজীবী মা ও গর্ভবতীদের জন্য একটি নিরাপদ কাজের পরিবেশ নিশ্চিতে কারখানাগুলোকে সহায়তা করবে এই উদ্যোগ।

বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছে ইউনিসেফ। সংস্থাটি জানায়, বেতনসহ ছুটি, মায়ের দুধ খাওয়ানো ও প্রসবপূর্ব সেবা নিশ্চিত হলে তা শিশুর সুস্বাস্থ্য, সুখী পরিবার গঠনের পাশাপাশি লিঙ্গ সমতা, কর্মক্ষেত্রে উৎদনশীলতা এবং টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, পোশাক রপ্তানির দিক থেকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম। দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) খাতটির অবদান ১১ শতাংশ। পোশাক কারখানায় কাজ করছেন প্রায় ৪০ লাখ মানুষ, যাদের অর্ধেকেরও বেশি প্রজনন বয়সী নারী। তবে ইউনিসেফের ২০১৮ সালের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, পোশাক কারখানায় মায়ের দুধ খাওয়ানোর জন্য কাজের বিরতি ও ব্যক্তিগত জায়গার ঘাটতি রয়েছে। অথচ বিষয়টি শিশুর স্বাস্থ্য ও বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, কর্মক্ষেত্রে নারীদের জন্য লক্ষ্যযুক্ত সহায়তা প্রদান করা এবং নারীরা যাতে কর্মক্ষেত্রে যোগদান করতে পারেন, তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের সন্তানদের যত্ন নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করা, নারীদের এবং তাদের শিশুদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি এমন একটি বিনিয়োগ যা থেকে সকলেই উপকৃত হবে।

ইউনিসেফের একটি পাইলট প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে জানা যায়, পোশাক কারখানাগুলোতে এই অংশীদারিত্বের ফলে ১ লাখ ৩০ হাজার নারীর কাজের অবস্থার উন্নতি ঘটবে। একইসঙ্গে তাদের ৮ হাজারের অধিক শিশুর জন্য টেকসই উপায়ে উন্নত পুষ্টি সেবা ও ডে-কেয়ার সুবিধা দেবে। ইতোমধ্যে ৮০টি কারখানায় শুরু হওয়া এই উদ্যোগ লক্ষ্য অনুযায়ী শেষ পর্যন্ত দেশের চার হাজার কারখানায় ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করবে।

অনুষ্ঠানে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, পোশাক কারখানায় নিয়োজিত মা এবং গর্ভবতী নারীদের জন্য কর্মক্ষেত্রকে নিরাপদ রাখা অপরিহার্য, যাতে তাদের সুস্থতা রক্ষা করা যায় এবং তাদের শিশুদের সুস্থ বিকাশে সহায়তা করার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত হয়।

বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমান বলেন, আমাদের কারখানাগুলোতে মায়েদের জন্য, শ্রমিকদের জন্য, তাদের সন্তান যারা দেশের ভবিষ্যৎ তাদের জন্য এবং সর্বোপরি ব্যবসার বিকাশের জন্য নিট পোশাক খাতে কাজের একটি অনুকূল পরিবেশ গড়ে তুলতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

টিআই/এসআই/আরএইচ