ধারাবাহিকভাবে কমছে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। যার প্রভাব পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত রিজার্ভে। এমন পরিস্থিতিতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে দেশে প্রবাসীদের অর্থ পাঠানোর সময় প্রযোজ্য ফি ব্যাংকগুলোকে বহন করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

রাজধানীর মিরপুর বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমিতে সম্প্রতি সিএমএসএমই খাতে ‘উদ্যোক্তা/ দক্ষ কর্মী উন্নয়নে প্রশিক্ষণের অবদান বিষয়ে সম্মেলন এবং উন্মুক্ত ঋণ বিতরণ’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্টের স্কিল ফর এপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (এসইআইপি) অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেন। ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন এসইআইপি প্রকল্পের নির্বাহী প্রকল্প পরিচালক মো. এখলাছুর রহমান। অনুষ্ঠানে প্রকল্পের কর্মকর্তারা ছাড়াও তফসিলি ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহী, বিভিন্ন অংশীজন ও উদ্যোক্তারা উপস্থিত ছিলেন।

রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে এবং ওয়েজ আর্নারদের রেমিট্যান্স পাঠানোর ব্যয় কমানোর উদ্দেশে দেশে অর্থ প্রেরণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ফি ব্যাংকগুলোকে বহনের আহ্বান জানিয়ে গভর্নর বলেন, এর ফলে একদিকে যেমন রেমিট্যান্স প্রেরণকারীরা দেশে অর্থ প্রেরণে উৎসাহিত হবেন, অপরদিকে ব্যাংকগুলোও তাদের কাঙ্ক্ষিত প্রাপ্তির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সক্ষম হবে।

ব্যাংক নির্বাহীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, প্রবাসীদের কষ্টার্জিত টাকা যেন কোনোভাবেই অবৈধ চ্যানেলে না যায় সে ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর জোর দিতে হবে। প্রয়োজনে মালদ্বীপসহ যেসব দেশ থেকে রেমিট্যান্স আহরণের সুযোগ রয়েছে, সেসব দেশে এক্সচেঞ্জ হাউজ স্থাপনের উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া গম, চিনি, ডাল, ভোজ্য তেলসহ আমদানি নির্ভর যেসব খাদ্যসামগ্রী রয়েছে সেগুলোর আমদানি যেন কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসদ্রব্য আমদানিতে এলসি খোলার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করতে ব্যাংকারদের নির্দেশনা প্রদান করেন তিনি।

গভর্নর বলেন, দেশের তরুণ উদ্যমী উদ্যোক্তাদের এগিয়ে নেওয়ার প্রয়াসে ‘উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রোগ্রাম’ অনবদ্য ভূমিকা পালন করছে।

এসইআইপি প্রোগ্রাম একটি প্রতীকী উদ্যোগ উল্লেখ করে ব্যাংকারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, সব ব্যাংক তাদের সিএসআর তহবিল থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত এ ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারে। সেক্ষেত্রে সিএসআর নীতিমালায় কোনো ধরনের পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে তা করা হবে বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।

বিভিন্ন ব্যাংকের অধীনে প্রশিক্ষণ কোর্স সমাপ্তকারী উদ্যোক্তাদের মধ্য থেকে ৮৮ জনের হাতে গভর্নর প্রতীকী চেক তুলে দেওয়ার মাধ্যমে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছের বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এসইআইপি প্রকল্পের আওতায় উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ে বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা সম্ভব। উচ্চ মূল্যমানের পণ্য উৎপাদনে এবং দক্ষ কর্মবল সৃষ্টিতে এ প্রোগ্রামের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

এসময় সোনালী ব্যাংকের সিইও ও এমডি আফজাল করিম, ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি ও সিইও সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন, ইসলামী ব্যাংকের এমডি ও সিইও মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা এবং আইএফআইসি ব্যাংকের এমডি ও সিইও শাহ্ এ সারওয়ার উপস্থিত ছিলেন।

এসআই/এমএইচএস