প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার (৬ ডিসেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন ‘বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনমিক জোন (জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল)’। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রত্যাশা করছে বেজা।

রোববার (০৪ ডিসেম্বর) নগরীর বেজা কার্যালয়ে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন।

তিনি আরও বলেন, দেশের সম্ভাবনাময় এলাকায় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, পরিকল্পিত শিল্পায়ন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নে বেসরকারি ডেভেলপারের অংশগ্রহণ এবং ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ আইন’ প্রণয়নের গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার। অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল অর্থনৈতিক মুক্তির মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা।

‘প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ২০১৩ সাল থেকে পরিকল্পিত শিল্পায়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির দৃশ্যপট পরিবর্তন করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন কাজের সূচনা করেন। ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী অর্থনৈতিক অঞ্চলে কয়েকটি শিল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী সবশেষ গত ২০ নভেম্বর ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে অর্থনৈতিক অঞ্চলের ৫০টি শিল্প ও অবকাঠামো উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন’ করেন।

‘কোভি৬-১৯ মহামারি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশের উন্নয়ন কাজ স্থবির হয়ে পড়লেও বেজা তার উন্নয়ন কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী গত ২০ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে প্রথমবারের মতো ৪টি শিল্পের বাণিজ্যিক কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন, যার মধ্যে ছিল ভারতের এশিয়ান পেইন্টস, জাপানের নিপ্পন স্টিল, বাংলাদেশ ম্যাকডোনাল্ড ও টি কে গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সামুদা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা আশা করি জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশে জাপানিজ বিনিয়োগ এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে। ইতোমধ্যে এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প নির্মাণ কাজ শুরু করেছে বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান সিঙ্গার, চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে জার্মান কোম্পানি রুডলফের সঙ্গে। উদ্বোধনের দিনেই আগামী ৬ ডিসেম্বর এ জোনে ২টি জাপানিজ বিনিয়োগকারীর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হতে যাচ্ছে। এছাড়াও, আরও ৩০টি জাপানি এবং অন্যান্য দেশের ১০টি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছেন। খুব শিগগিরই বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিস্বাক্ষর করা যাবে। পুরো অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হলে এখানে আনুমানিক ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এছাড়া এখানে প্রাথমিকভাবে লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের পথচলা শুরু হয় ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরের মাধ্যমে। ২০১৫ সালে জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের বাংলাদেশ সফরের সময় বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়। ২০১৬ সালে জাইকা বাংলাদেশে একটি জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ হাতে নেয় এবং একই বছর জাপান সরকার বিশ্ব বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান সুমিতোমো করপোরেশনকে ডেভেলপার হিসেবে নিয়োগ করার জন্য সুপারিশ করে। ২০১৮ সালে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষে জাইকা নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের পক্ষে মত দেয়। পরবর্তী সময়ে যৌথ উদ্যোগে জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে ২০১১ সালে বেজা ও সুমিতমো করপোরেশনের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

বেজা ২০১৯ সালে প্রস্তাবিত এলাকায় জমি অধিগ্রহণ ও ভূমি উন্নয়ন কাজ শুরু করে। জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে ৫০০ একর ভূমি উন্নয়ন কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে পাশাপাশি নির্মাণ করা হয়েছে সংযোগ সড়ক,  নিশ্চিত করা হয়েছে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা। নির্মাণ শুরু হয়েছে অভ্যন্তরীণ সড়ক, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা। এ পর্যন্ত কোম্পানির অনুকূলে ১৮০ একর উন্নত জমি বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনমিক জোনকে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং তা শিল্প কারখানা তৈরির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। অবশিষ্ট জমি খুব শিগগিরই হস্তান্তর করা হবে।

বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনমিক জোন লিমিটেড হতে জানা যায় যে, এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে জাপানিজ বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠেছে এবং প্রতিনিয়ত বিনিয়োগকারীরা জোনটি পরিদর্শন করছে। আমি মনে করি, আগামীতে হাজার হাজার তরুণের ‘স্বপ্নের গন্তব্য’ হবে জাপানিজ জোন এবং জাপান-বাংলাদেশের মধ্যে টেকনোলজি ট্রান্সফারের পথ সুগম হবে।

এসআর/এসএম