ঘুষের বিনিময়ে হাজার হাজার কোটি টাকার লোপাটের তথ্য চাপার অভিযোগ ওঠায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের দায়িত্ব থেকে নির্বাহী পরিচালক (ইডি) শাহ আলমকে সরিয়ে দেওয়া হয়। দায়িত্ব পান জ্যেষ্ঠতার তালিকায় থাকা প্রথম ব্যক্তি হুমায়ুন কবির। এক মাসের মাথায় হঠাৎ করে বিভাগটির দায়িত্বে আবারও পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নির্বাহী পরিচালক আবুল কালাম আজাদকে।

এখন থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগসহ মোট দুটি বিভাগের দায়িত্ব পালন করবেন আবুল কালাম আজাদ। ওই বিভাগ ছাড়া আইপিএফএফ-২ বিভাগের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। এর আগে আবুল কালাম আজাদ বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগ, সচিব বিভাগ, ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-১ ও ২-এ মহাব্যবস্থাপক পদে কর্মরত ছিলেন। নির্বাহী পরিচালক হুমায়ূন কবিরের দায়িত্বে বর্তমানে রয়েছে বৈদেশিক মুদ্রা নীতি, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ গৃহায়ণ তহবিল ও পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্ট।

দায়িত্বে পরিবর্তনকে স্বাভাবিক বলছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া স্বাভাবিক প্রক্রিয়ারই অংশ।

এদিকে ইডি শাহ আলমের দায়িত্বে রয়েছে স্পেশাল স্টাডিজ সেল ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা বিভাগ। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরও কেন তার বিরুদ্ধে শক্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি- এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন খোদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাধারণ কর্মীরা। তারা জানান, একজনের অপরাধে পুরো কেন্দ্রীয় ব্যাংক কলঙ্কিত হয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সরিয়ে স্বাভাবিক নিয়মে অন্য জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া ঠিক হয়নি। তাকে অপসারণ করা উচিত ছিল। কোনো শক্ত পদক্ষেপ না নেওয়ায় গভর্নরের মান ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জানান, তাদের বেশিরভাগ কর্মী দক্ষতা ও সততার সঙ্গে কাজ করেন। দু-একজন কর্মকর্তার জন্য বদনাম গ্রহণযোগ্য নয়। তাই যাদের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে- সঠিক তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। অভিযোগ সঠিক হলে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এভাবে অনিয়মের অভিযোগ এড়িয়ে গেলে আগামীতে অন্যান্য কর্মকর্তারাও অনিয়মে জড়িয়ে পড়বেন।    

দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম দুর্নীতি আর লুটপাটের কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছে বেশি কিছু ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান। অবসায়নের প্রক্রিয়ায় আছে পিপলস লিজিং। আমানতকারীদের জমানো অর্থ ফেরত দিতে পারছে না ইন্টারন্যাশনাল লিজিংসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান। এছাড়া বিআইএফসি, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, প্রিমিয়ার লিজিংসহ ডজনখানেক প্রতিষ্ঠান রেড জোনে রয়েছে।
 
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর (২০২০) শে‌ষে এনবিএফআইর খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৪৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা, যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ১৫ শতাংশ। আগে জুন প্রান্তিকে মোট খেলাপি ছিল মোট ঋণের ১৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত বছরের প্রথম ৯ মাসে এই খাতে তিন হাজার ৮০০ কোটি টাকারও বেশি খেলাপি ঋণ বেড়েছে। এর মধ্যে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এই তিন মাসেই বেড়েছে এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা।

এসআই/আরএইচ