বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করছেন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন/ ঢাকা পোস্ট

রমজানের পণ্য আমদানিতে সুবিধার জন্য রিজার্ভ থেকে ডলার সহায়তা চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত ঋণের কিস্তি পরিশোধ না ক‌রেও ‘খেলাপি’র তকমা থেকে রেহাই চেয়েছেন তারা।

সোমবার (১২ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে এক বৈঠকে নিজেদের এসব চাওয়ার কথা তুলে ধরেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের নেতারা।

বৈঠকের পর এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, রোজায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়াও আরও অনেক পণ্য প্রয়োজন হয়। এজন্য আমদানি সহজ করার জন্য বলেছি। প্রয়োজনে রিজার্ভ থেকে এলসি খোলার জন্য সহায়তা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের আশ্বস্ত করেছে।

আরও পড়ুন : চার মাসে বাণিজ্য ঘাটতি ১ লাখ কোটি টাকার বেশি 

তিনি আরও বলেন, জ্বালানি ও গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এসব কারণে ফ্যাক্টরি চালানো যাচ্ছে না। এলসি না খোলার কারণে কাঁচামাল আমদানি করা যাচ্ছে না। এজন্য ব্যবসার ওপর একটা প্রভাব পড়ছে। আর ব্যবসা করতে না পারলে ঋণের কিস্তি দেওয়া যাবে না। তাই ঋণ পরিশোধের সুবিধাটি আগামী বছরের জুন পর্যন্ত দেওয়া হোক। যাতে কেউ খেলাপি না হয়। গ্রাহক খেলাপি হলে ব্যাংকও খেলাপি হয়ে যাবে। তাই সময় বৃদ্ধি করা যৌক্তিক মনে করছি।

জসিম উদ্দিন বলেন, আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে ডলারের যে পার্থক্য রয়েছে তা এক রেট করার জন্য বলেছি। কারণ কাঁচামাল আমদানি করার জন্য একজন ব্যবসায়ীর খরচ পড়ে ১০৫ টাকা। কিন্তু পণ্য রপ্তানি করতে গেলে সেটা ১০১ টাকা হয়। এক্ষেত্রে একটা পার্থক্য থেকে যায়। তাই এটা এক রেট করার দাবি জানিয়েছি। এছাড়া ইডিএফ ফান্ডের ঋণের সুবিধা চাওয়া হয়েছে। ইডিএফ ঋণের মেয়াদ ১৮০ দিন থেকে বাড়িয়ে ২৭০ দিন করার দাবি জানিয়েছি।  

তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে কোভিডের চেয়ে খারাপ অবস্থা। তাই আমরা এসব সুবিধা চেয়েছি। বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের আশ্বস্ত করেছে, তারা সবগুলো বিষয় পর্যালোচনা করবে।

সুদ হারের ক্যাপ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, সুদের হার কম থাকলে বিনিয়োগ বেশি হয়। তাই সুদ হারের ক্যাপ এখন তোলার প্রয়োজন দেখছি না। এজন্য অনুরোধ জানিয়েছি আগামী এক বছর যাতে সুদ হারের ক্যাপ না তোলা হয়। কারণ সুদ হার বাড়ালে যে মূল্যস্ফীতি কমবে তা নয়। কারণ অনেক সাধারণ মানুষ ব্যাংকের বাইরেও রয়েছে। আমরা আমদানি-নির্ভর দেশ। সুদ হার বাড়ালে মানুষের খরচ বেড়ে যাবে।

আরও পড়ুন : তারল্য সংক‌ট কাটাতে ইসলামী ব্যাংকগুলো পা‌বে বিশেষ সুবিধা

তিনি বলেন, ঋণ শ্রেণিকরণ সুবিধার মেয়াদ বৃদ্ধি করা না হলে অধিকাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অনিচ্ছাকৃত খেলাপিতে পরিণত হবে। এতে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এ কারণে ঋণ বিরূপ মানে শ্রেণিকরণ প্রক্রিয়া আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত স্থগিত রাখার দাবি জানিয়েছি। বাংলাদেশ ব্যাংকও এ বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছে।  

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এফবিসিসিআই পলিসিগত সুবিধা চেয়েছে। আমরা এফবিসিসিআইয়ের বিষয়গুলো বিবেচনা করে দেখব। তবে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত জানানো যাচ্ছে না।

খেলাপি না হওয়ার বিষয়ে এফবিসিসিআই আবেদন জানিয়েছে - এক্ষেত্রে বাংলাদেশের ব্যাংকের অবস্থান কী? এমন প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র বলেন, করোনাকালে নীতি সহায়তা দিয়েছি। বর্তমানে যে পরিস্থিতি রয়েছে, সে অনুযায়ী এমন নীতি সহায়তা আসতে পারে। 

রিজার্ভ থেকে ডলার সহায়তা চাওয়ার বিষয়ে মেজবাউল হক বলেন, রেমিট্যান্স বাড়ছে। আমদানি কমেছে। আগের চেয়ে ডলার সংকট কমে আসবে। তখন ব্যাংক নিজেই এলসি খুলতে পারবে। এরপরও যদি প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক সহায়তা করবে।

আমদানি-রপ্তানির রেট এক করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমদানি-রপ্তানির রেট কখনোই এক হয় না। এটার একটা পার্থক্য থাকে। সাধারণত দুই টাকার পার্থক্য থাকে। আমরা সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছি।

এসআই/এসকেডি