বর্তমান বাজারে চার সদস্যের একটি পরিবারে মাছ-মাংস ছাড়াই খাবারের জন্য খরচ হচ্ছে ৯ হাজার ৫৫৭ টাকা। আটটি খাত ছাড়া অন্য কোনো সেক্টরের কর্মীর এই ব্যয় বহন করার সক্ষমতা নেই। মাছ-মাংস ধরলে খাবারের এ খরচ দাঁড়ায় ২৩ হাজার ৬৭৬ টাকা।  

আজ (শনিবার) মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার ইন অডিটোরিয়ামে ‘সংকটে অর্থনীতি : কর্মপরিকল্পনা কী হতে পারে?’ শীর্ষক সংলাপে উপস্থাপিত গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।  

সিপিডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মজুরি পর্যালোচনার সর্বশেষ বছর থেকে মূল বেতনের ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হলেও সমস্ত শিল্পের শ্রমিকদের জন্য চার সদস্যের একটি পরিবারের খাদ্যের এই খরচ বহন করার সক্ষমতা তৈরি হবে না।

সংলাপে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান প্রধান অতিথি ও আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান হাবিব মনসুর, বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এবং বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের এমডি রূপালী হক চৌধুরী। 

ড. ফাহমিদা তার প্রবন্ধ উপস্থাপনায় বলেন, মূল্যস্ফীতি যে অবস্থায় ছিল সেখান থেকে আরও ঘনীভূত হয়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বড় কারণ হলেও আগে থেকেই মূল্যস্ফীতি বেশি ছিল। আন্তর্জাতিক বাজারের কারণে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে, কিন্তু অভ্যন্তরীণ বাজারের পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা বড় কারণ। এর ফলে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের ওপর ক্রমাগত চাপ বাড়ছে। আগে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বাড়লে খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কমতো। কিন্তু এখন দুটোই সমানতালে বেড়ে চলছে। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তুলনা করলেও অনেক পণ্যের ক্ষেত্রেই মূল্যের ঊর্ধ্বগতি বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে চাল, গম, ভোজ্য তেল, চিনি কিংবা গরুর মাংসের মূল্যের ক্ষেত্রে এমন প্রবণতা রয়েছে। অর্থাৎ খাদ্য মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি হারে বাড়ছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্য আগে একটি স্থিতিশীল অবস্থায় ছিল। কিন্তু এখন সেই জায়গাতেও অস্থিতিশীলতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে মুদ্রার বিনিময় হার, রিজার্ভ ব্যবহারের দুর্বলতা, ট্রেড ইনভয়েসিংয়ের কারণে অর্থ পাচার ইত্যাদি। এসব কারণে এক ধরনের ভঙ্গুরতা লক্ষ্য করা গেছে।

রিজার্ভের বিষয়ে সিপিডি বলছে, রিজার্ভের হিসাব নিয়ে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে। রিজার্ভের কারণে এলসি খোলা কিংবা আমদানির ক্ষেত্রে চাপ তৈরি হয়েছে। রপ্তানি বাড়লেও কারেন্ট হিসাব ব্যালেন্স নেতিবাচক। রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে এসেছে। বিদেশে মানুষ যাওয়ার প্রবণতা বাড়লেও রেমিট্যান্স বাড়ছে না। এখানে হুন্ডি মার্কেট বিরাটভাবে প্রভাবিত করছে, সরকারের আড়াই শতাংশ নগদ প্রণোদনা থাকা সত্ত্বেও রেমিট্যান্স বাড়ছে না। এটা একটি চিন্তার বিষয়। বিলাসবহুল ও অপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগের কারণে অপ্রয়োজনীয় এলসি খোলার প্রবণতা কমেছে। 

আরও পড়ুন : হুন্ডি খাচ্ছে রেমিট্যান্স 

ফাহমিদা বলেন, আর্থিক ব্যবস্থাপনায় দেখতে পারছি এনবিআরের রাজস্ব আয় বেড়েছে। পরোক্ষ কর অর্থাৎ আমদানি বৃদ্ধির কারণে এ আয় বেড়েছে। এডিপি বাস্তবায়নের হার গত ৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম দেখা যাচ্ছে; যা ১২.৮ শতাংশ। প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়া এর বড় কারণ বলে দেখা যাচ্ছে। বাজেট ঘাটতি মেটাতে প্রথম চার মাসে ব্যাংকিং সেক্টর থেকে অর্থ নেওয়ার হার বেড়ে যাচ্ছে ও সঞ্চয় কমে যাচ্ছে।  

আরএম/এনএফ