ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে। ঊর্ধ্বগতির দিকে থাকা দেশের প্রধান এ সমুদ্র বন্দরে হঠাৎ কনটেইনার পরিবহন কমেছে। আগের বছরের তুলনায় এ বন্দর দিয়ে কনটেইনার হ্যান্ডলিং কমেছে ৭১ হাজার ৪৯৬ টিইইউস (২০ ফুট দৈর্ঘ্যের একক)। তবে কনটেইনার পরিবহন কমলেও বন্দর দিয়ে বেড়েছে কার্গো হ্যান্ডলিং। এছাড়াও বেড়েছে জাহাজ আগমনের সংখ্যা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বের অর্থনীতিতে অস্থিরতা চলছে। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে। দেশে ডলারের সংকট তৈরি হয়েছে। এলসি খোলার ক্ষেত্রে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে। বিলাসজাত পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে সরকার নানা শর্তা আরোপ করা হয়েছে।

আবার দেশে তৈরি পোশাকের অন্যতম বাজার ইউরোপ-আমেরিকা। তাছাড়া রাশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যেও বাংলাদেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। তবে বর্তমানে ওইসব দেশ অর্ডার কমিয়ে দিয়েছে। অর্ডার কম হওয়ার কারণে দেশের পোশাক কারখানায় উৎপাদন কমেছে। উৎপাদন কম হওয়ায় বন্দর দিয়ে কাঁচামাল আমদানিও কমেছে। সব মিলিয়ে করোনা সংক্রমণের পর সংকট কাটিয়ে ওঠা বন্দর আবার হোঁচট খেয়েছে।

আরও পড়ুন : লয়েডস লিস্টের বৈশ্বিক তালিকায় ৩ ধাপ এগিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে ৩১ লাখ ৪২ হাজার ৫০৪টি। ২০২১ সালে এই সংখ্যা ছিল প্রায় ৩২ লাখ ১৪ হাজার। সদ্য বিদায়ী বছরে এ বন্দর কার্গো হ্যান্ডলিং করেছে ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৬৫ হাজার ৬৮২ টন। ২০২১ সালে করা হয়েছিল ১১ কোটি ৬৬ লাখ ১৯ হাজার ১৫৮ টন।

২০২২ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ এসেছে চার হাজার ৩৬১টি। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে বন্দরে জাহাজ আগমনের সংখ্যা ছিল চার হাজার ২০৯টি।

এ বিষয়ে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বন্দর দিয়ে কার্গো হ্যান্ডলিং বেড়েছে কারণ দেশের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পণ্য আমদানি করায়। তাছাড়া সার্বিকভাবে দেশের আমদানি-রপ্তানি কমেছে। এটার কারণ বৈশ্বিক। যুদ্ধের কারণে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে তৈরি পোশাকের চাহিদা কমেছে। অর্ডার কম হওয়ায় দেশে উৎপাদনও কমেছে। শিগগিরই এ সমস্যা সমাধান হচ্ছে না। যতদিন না ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের একটি সমাধান হয়।

আরও পড়ুন : ৪৬৮ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি : টনক নড়ল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের 

চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারী ফোরাম ও চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশে আমদানি-রপ্তানি দুটিই কমেছে। তবে রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি কমেছে। যুদ্ধ ও ডলার সংকটের কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট কাটবে না।

চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, যুদ্ধের কারণে বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং কম হয়েছে। আশা করি, সংকট কেটে যাবে। বন্দরে গতি ফিরে আসবে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের আমদানি ও রপ্তানির ৯২ শতাংশেরও বেশি পণ্য এবং ৯৮ শতাংশ কনটেইনারজাত পণ্য হ্যান্ডলিং করে। বন্দরে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাত হাজার কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়। আর রাজস্ব আদায় হয় দৈনিক হাজার কোটি টাকা।

এসকেডি